ভোটার আইডি কার্ড বাংলাদেশের যেকোনো নাগরিকের জন্য অত্যাবশ্যকীয় এটি আপনার পরিচয় বহন করে এবং প্রমাণ দেয় যে আপনি বাংলাদেশের নাগরিক। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভোটার আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন হয় যেমন চাকরির আবেদন করা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা, পাসপোর্টের আবেদন করা সহ বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা পেতে হলে অবশ্যই আপনার ভোটার আইডি থাকতে হবে।
আপনার বয়স যদি ১৬ বছর হয়ে থাকে তাহলে আপনাকে নতুন ভোটার আবেদন করতে হবে। আজকের আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা জানানোর চেষ্টা করবো যে কিভাবে ভোটার আইডির জন্য আবেদন করবেন এবং এটি করতে কি কি প্রয়োজন হয়। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে শুরু করি।
নতুন ভোটার আবেদন (NID Registration) করতে হলে কি কি প্রয়োজন?
নতুন ভোটার আবেদন করতে হলে আপনার কাছে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস থাকতে হবে বোর্ড পরিক্ষার সার্টিফিকেট, জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট (অবশ্যই ডিজিটাল), নাগরিকত্ব সনদ এবং বাবা মায়ের NID Card এর ফটোকপি। এছাড়া আপনার বর্তমান ঠিকানা প্রমাণের জন্য বিদ্যুৎ বিল কিংবা গ্যাস বিলের কপি প্রয়োজন হবে। একইসাথে NID card এ রক্তের গ্রুপ যুক্ত করার জন্য ক্লিনিক বা হাসপাতাল হতে গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট লাগবে।
এছাড়া একটি বিষয় আপনাকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আপনি যদি পূর্বে জাতীয় পরিচয়পত্রে নিবন্ধন করে থাকেন তাহলে পুনরায় এটি আর করতে পারবেন না। তাই আপনি যে পূর্বে নিবন্ধন করেননি তার প্রমাণস্বরূপ একটি একটি অঙ্গীকারনামাও জমা দিতে হবে। আপনি বিবাহিত হলে কাবিননামা বা বৈবাহিক সনদ আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। এছাড়া স্বামী বা স্ত্রীর আইডি কার্ডের ফটোকপিও জমা দিতে হবে।
জেনে নিনঃ নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে
নতুন ভোটার আবেদন করবেন কিভাবে?
আপনি যদি নতুন ভোটার হতে চান তাহলে আপনাকে সঠিক উপায়ে আবেদন করতে হবে। নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করলেই আপনি নতুন ভোটার হিসেবে আবেদন করতে পারবেন। ধাপ গুলো পর্যায়ক্রমে নিচে দেয়া হলোঃ
ধাপ ১ঃ প্রথমেই আপনার কম্পিউটার থেকে ভিজিট করুন nidw.gov.bd লিঙ্কে। এই লিঙ্ক থেকে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করবেন আপনি।
ধাপ ২ঃ ওয়েবসাইট এ প্রবেশের পর আপনাকে একটি অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, এজন্য “নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন” এই অপশন থেকে “আবেদন করুন” এ ক্লিক করুন।
ধাপ ৩ঃ এখন আপনার সামনে একটি ফরম আসবে যেখানে আপনাকে আপনার নাম, জন্ম তারিখ লিখে ক্যাপচা কোড লিখে সাবমিট করতে হবে।
ধাপ ৪ঃ মোবাইল ভেরিফিকেশনের জন্য আপনাকে একটি সচল মোবাইল নম্বর দিতে হবে। এছাড়া কখনও যদি আপনার অ্যাকাউন্ট এর পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে চান তাহলে তখনও এই নম্বরটি প্রয়োজন হবে।
ধাপ ৫ঃ মোবাইল নাম্বার ভেরিফিকেশনের জন্য আপনাকে একটি কোড সেন্ড করবে, সেটা দিয়ে আপনার মোবাইল নাম্বার যাচাই করা হবে। এই ধাপে কোড দিয়ে বহাল / সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন
ধাপ ৬ঃ এই ধাপে আপনাকে ইউজার নাম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে একাউন্ট নিবন্ধান করা হবে।
ধাপ ৭ঃ অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন এবং লগইন করার পর প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করুন এবং এর উপরে থাকা এডিট বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৬ঃ এরপর আপনার সামনে একটি পেজ ওপেন হবে যেখানে আপনাকে ব্যক্তিগত তথ্য এবং অন্যান্য তথ্য লিখতে হবে।
ধাপ ৭ঃ এখানে আপনি তিনটি অংশ পাবেন – ব্যক্তিগত তথ্য, অন্যান্য তথ্য এবং ঠিকানা। একেকটি অপশনে ক্লিক করে সেই তথ্য গুলো আপনাকে প্রদান করতে হবে। তবে এই তথ্যগুলো অবশ্যই সতর্কতার সাথে প্রদান করবেন যেন কোন ভুল না হয়।
ধাপ ৮ঃ বর্তমান ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানার স্থানে সঠিকভাবে আপনার ঠিকানা লিখুন। তবে আপনি কোন ঠিকানায় ভোটার হতে চান সেটা ভোটার এড়িয়ে অংশ থেকে বাছাই করবেন।
ধাপ ৯ঃ পরবর্তী ধাপে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলোর স্ক্যানড কপি আপলোড করতে হবে।
ধাপ ১০ঃ এখন ইতিপূর্বে আপনার উপস্থাপন করা তথ্যগুলো একবার যাচাই করে নিন, কোথাও ভুল থাকলে তা সংশোধন করে নিন। সব তথ্য সঠিক তা নিশ্চিত করে সাবমিট করুন।
বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান এবং ভোটার আইডি কার্ড ডাউনলোড
যেহেতু আপনি আবেদন করেছেন সেহেতু উপজেলা বা জেলা নির্বাচন অফিস এই তথ্যগুলো যাচাই বাছাই করবে এবং আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে তারা বায়োমেট্রিক প্রদানের জন্য আপনাকে ডাকবে। বায়োমেট্রিক নেয়া হয়ে গেলে ঠিক ১৫ থেকে ৩০ দিন পর আপনার আবেদনটি অনুমোদন পাবে। অনুমোদন হয়ে গেলেই আপনি জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।
নতুন ভোটার আবেদনের ক্ষেত্রে কখন অঙ্গীকারনামা লিখতে হয়?
যারা নতুন ভোটার আবেদন করবেন তাদের সকলেরই অঙ্গীকারনামা লেখার প্রয়োজন নেই। এটি তারাই লিখবেন যারা বয়স এবং সুযোগ হওয়া সত্ত্বেও ভোটার আবেদন করেননি। এছাড়া এমন অনেকেই আছেন যারা বিদেশে থাকার কারণে ভোটার আবেদন করতে পারেননি তাদেরকেও নতুন ভোটার আবেদন করার ক্ষেত্রে অঙ্গীকারনামা লিখতে হবে। এটি লেখার অর্থ এই যে আবেদনকারী এর আগে কখনও জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন করেননি।
শেষ কথা
নতুন ভোটার আবেদন সম্পর্কে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন রকম প্রশ্ন থাকতে পারে, বিশেষ করে যারা নতুন ভোটার হবেন। নতুন ভোটার হিসেবে আবেদন করার নিয়মকানুন গুলো আপনার সূক্ষ্মভাবে জানা প্রয়োজন। তাহলে আপনি বাড়িতে বসেই খুব সহজেই ভোটার আবেদন করতে পারবেন। উপরের ইতিমধ্যেই আমরা পদ্ধতিটি সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
এছাড়া আবেদন করতে আপনাকে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের scanned copy লাগবে যেগুলো আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। আপনারা চেষ্টা করবেন প্রদেয় তথ্যগুলো সঠিক তা নিশ্চিত করার। যদি সবকিছু ঠিক থাকে তাহলে আপনারা ৩০ দিনের মধ্যেই ভোটার আইডি কার্ড পেয়ে যাবেন এবং ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।