আপনি কি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে চাইছেন? জন্ম নিবন্ধন সনদ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যেটা আপনার নাগরিকত্বের পরিচয় বহন করে। এমনকি আপনি যদি জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে চান তাহলেও এই সনদটির তথ্য প্রয়োজন হবে আপনার। যাইহোক, নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনলাইন আবেদন করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই সঠিক উপায় সম্পর্কে জানতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন আবেদন
জন্ম নিবন্ধন আবেদন আপনি বাড়িতে বসেই করতে পারবেন। যেহেতু এখন পুরো প্রক্রিয়াটিই অনলাইনে সম্পন্ন করা যায় সেহেতু আবেদনকারী কয়েকটি স্টেপ ফলো করলেই নিজ বাড়িতে বসেই অনলাইনের সাহায্যে আবেদন করতে পারবেন।
জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনলাইন আবেদন করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট তথ্য ও কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়, যা আবেদন প্রক্রিয়াকে সঠিক ও সহজ করে তোলে। সর্বপ্রথম প্রয়োজন হবে জন্মের প্রমাণপত্র, যেমন হাসপাতালের ছাড়পত্র বা ডাক্তারের সনদ, যা নবজাতকের জন্ম তারিখ এবং স্থান নিশ্চিত করে। এরপর পিতা ও মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের (NID) কপি এবং তাঁদের জন্ম নিবন্ধন নম্বর (যদি থাকে) প্রদান করতে হয়, যা পারিবারিক পরিচয় যাচাইয়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আবেদনকারীকে নবজাতকের বা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম, জন্ম তারিখ, লিঙ্গ, জন্মস্থান, স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা ইত্যাদি সঠিকভাবে পূরণ করতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির প্রত্যয়নপত্রও প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষ করে বয়স বেশি হলে বা পূর্বে জন্ম নিবন্ধন না থাকলে। এছাড়া আবেদনকারীর একটি সচল মোবাইল নম্বর দিতে হয় যাতে কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় তথ্য বা আপডেট জানাতে পারে। সব তথ্য অনলাইনে সঠিকভাবে পূরণ করার পর, আবেদনটি সাবমিট করতে হয় এবং একটি আবেদন নম্বর পাওয়া যায়, যা পরবর্তী সময়ে সনদ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজন হয়।
জন্ম নিবন্ধন অনলাইন করার নিয়ম
এখন আমরা জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে আবেদন করার প্রক্রিয়াটি দেখাতে চলেছি। আশা করছি স্টেপগুলো সঠিক ভাবে ফলো করলেই আপনি আবেদন সম্পন্ন করতে পারবেনঃ
১. প্রথমে আপনার কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে https://bdris.gov.bd/br/application লিঙ্কটি ভিজিট করুন।
সাইট এ প্রবেশ করার পর “জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন” অপশনটিতে ক্লিক করুন।
২য় ধাপে, এই খানে যাবার পর নিচের ছবির মত অপশন আসবে। আপনি নিম্নলিখিত কোন ঠিকানায় জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে চান?
- জন্মস্থান
- স্থায়ী ঠিকানা
এই ২টার মদ্দে যেকোনো ১টা ক্লিক করে নিবেন। আপনি যদি বাংলাদেশ দূতাবাসে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে চান, তবে এটি নির্বাচন করুন, মানে এই খনে ক্লিক করবেন।
৩য় ধাপে, যার জন্য জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে চান তার তথ্য গুলো পুরুন করবেন। যেমন, ব্যক্তির নাম (বাংলা ও ইংরেজি), জন্ম তারিখ, পিতামাতার কত তম সন্তান, লিঙ্গ, জন্মস্থান এর ঠিকানা ইত্যাদি তথ্য দিন। নিচের ছবি টা দেখে নিন।
৪র্থ ধাপে, আপনি আপনার পিতা-মাতার তথ্য দিবেন। যদি আবেদনকারী ১৮ বছর এর নিচে হয়/ তার ভোটার আইডি কার্ড না থাকে তাহলে অবশই পিতা ও মাতার উভয়ের জন্ম নিবন্ধন সনদ লাগবে। আর যদি আবেদনকারী ১৮ বছর এর বড় হয় এবং নিজের ভোটার আইডি থাকে তাহলে পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রয়োজন হবে না। সেই ক্ষেত্রে, শুধু তাদের ভোটার আইডি কার্ড (জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বার) থাকলেই হবে।
৪র্থ ধাপে, জন্ম নিবন্ধন আবেদন সম্পন্ন করার জন্য নিম্নলিখিত ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন। আপনার কি নিম্নলিখিত ডকুমেন্টগুলো আছে?
-
চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের ছাড়পত্র বা চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত জন্ম সংক্রান্ত সনদের সত্যায়িত কপি বা পূর্ববর্ত্ত আবেদনপত্রে বর্ণিত ঠিকানা না থাকলে আবেদনপত্রে বর্ণিত ঠিকানার প্রমাণপত্র বা ইভাইট কোর্টের সত্যায়িত অনুলিপি।
-
পিতা / মাতা / পিতামাতার / পিতামাতার দ্বারা স্বাক্ষর স্বীকৃত ঠিকানা হিসেবে ঘোষিত অন্য স্থানের বিপরীতে হলনাগাদ কর পরিশোধের প্রমাণপত্র বা পিতা / মাতা / পিতামাতার পরিচয়পত্র এর পাশাপাশি ঘোষিত ঠিকানা বা পাসপোর্ট ঘোষিত স্থায়ী ঠিকানা বা জমি অথবা বাড়ি ক্রয়ের দলিল, খাজনা ও কর পরিশোধ রসিদ। (নেদিষ্টজন অন্য কোন কারণে স্থায়ী ঠিকানা পরিবর্তন করলে)
আবেদনের সময় যদি আপনার কাছে উপরের ডকুমেন্টগুলো থাকে তাহলে “আমার কাছে এই ডকুমেন্টগুলো আছে” এই বটনে ক্লিক করুন, আর যদি না থাকে “আমার কাছে এই ডকুমেন্টগুলো নেই“বটনে ক্লিক করুন।
৫ম ধাপে, আপনাকে স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানার তথ্য গুলু পুরন করা লাগবে। যদি, আগের দেওয়া তথ্যে জন্মস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা একই হয়ে থাকে তাহলে নিচের টিক বক্সে টিক দিয়ে দিবেন। আবার স্থায়ী ঠিকানা ও বর্তমান ঠিকানা যদি একই হয়ে থাকে তাহলে নিচের টিক বক্সে টিক দিয়ে দিবেন। যদি ভিন্ন হয় তাহলে টিক না দিলে নতুন করে লিখে দিবেন। নিচের ছবি দেখে নিন।
৬ষ্ঠ ধাপে, আবেদনকারীর পরিচয় দিন, এই খানে আপনি নিজে আবেদন করলে “নিজ” সিলেক্ট করুন অথবা যদি বাবা আবেদন করেন তাহলে “পিতা” এই বাটন ক্লিক করুন। অর্থাৎ যে আবেদন করছেন, সে নিচের অপশনে সিলেক্ট করবেন। ভালো করে বুজার জন্য নিচের ইমেজ দেখে নিন।
এই ধাপে ১৮ বছর এর উপর হলে অবশই নিজের ভোটার আইডি কার্ড এর ছবি অ্যাড করা লাগবে। আর ১৮ বছর এর নিচে হলে টিকা কার্ড এর অরজিনাল ছবি লাগবে।
টিকা কার্ড না থাকলে, শিশু টিকা কার্ড রেজিস্ট্রেশন ও টিকা কার্ড ডাউনলোড করুন অনলাইনে
যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ড না থাকে তাহলে দেখে নিন, নতুন ভোটার আবেদন করতে কি কি লাগে? আবেদন এর নিয়ম দেখুন।
(নিবন্ধনযোগ্য ব্যাক্তি ১৮ বছরের নিচে হলে তাহার পিতা বা মাতা বা আইনানুগ অভিভাবক* বা বিধি-৯ মতে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যাক্তি** নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র/প্রমাণপত্র দাখিলপূর্বক আবেদন করতে পারবেন।)
-
আবেদনকারীর ব্যাক্তির সাথে সম্পর্কঃ
-
✅ পিতা
-
☐ মাতা
-
☐ নিজে
-
☐ পিতামহ
-
☐ পিতামহী
-
☐ মাতামহ
-
☐ আত্মীয়
-
☐ অভিভাবক*
-
☐ অন্যান্য**
-
আইনের ৮(ক) ধারা অনুযায়ী নিযুক্ত অভিভাবককে উপযুক্ত প্রমাণপত্র সংযুক্ত করিতে হইবে।
বিধি/নিয়ম ৯ অনুযায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে/ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট আবেদনপত্র/অন্যান্য প্রমাণপত্র সংযুক্ত করিতে হইবে।
আমি সততার সাথে ঘোষণা করিতেছি যে, উপরে বর্ণিত যাবতীয় তথ্য সঠিক এবং আমি/আবেদনকারী ব্যাক্তির হইতে অন্য কোথাও জন্ম নিবন্ধন হয় নাই, ইহা থাকিলে আমি তাহার জন্য আইনত দায়ী থাকিব।
উপরের সব তথ্য ঠিক থাকলে “পরবর্তী” বাটনে ক্লিক করুন।
৭ম ধাপে, ✅ Success, আবেদনপত্রটি সফলভাবে সাবমিট করা হয়েছে। এমন দেখাবে।
আবেদনপত্র নম্বর: 0000085 । আবেদনপত্র নম্বর টা অবশ্যই পরবর্তীতে প্রয়োজন হবে, তাই সংরক্ষণ করা লাগবে।
ভবিষ্যৎ অনুসন্ধানের জন্য আবেদন পরবর্তী নম্বরটি সংরক্ষণ করুন।
৮ম ধাপে, আবেদনপত্র প্রিন্ট বাটনে ক্লিক করে, আবেদনপত্রটি প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের (ওয়ার্ড/ইউনিয়ন অফিসে) নিকট দাখিল করুন।
দেখে নিনঃ জন্ম নিবন্ধন যাচাই করার নিয়ম অনলাইন মোবাইলে
এ পর্যায়ে জন্ম সনদের জন্য ডাক্তারি কাগজ, হাসপাতালের ছাড়পত্র বা স্কুলের সনদপত্র প্রয়োজন হতে পারে। আবেদনকারী যদি ৫ বছরের নিচের হন তাহলে তাঁর ক্ষেত্রে নির্ধারিত ডকুমেন্টস এবং ৫ বছরের উপরে হলে আলাদা ডকুমেন্টস সাবমিট করতে হবে।
আবেদন সম্পন্ন হলে একটি অ্যাপ্লিকেশন নম্বর পাবেন। এটিকে সংরক্ষণ করুন কারণ জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করার সময় এটি প্রয়োজন হতে পারে।
নোটঃ আবেদন সাবমিট করার পরে আবেদনটি সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ / পৌরসভা অফিস কর্তৃপক্ষ এটি যাচাই-বাছাই করেএবং যাচাইয়ের পর তারা সনদ প্রস্তুত করে। সাধারণত ৭–১৫ কার্যদিবসের মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সনদ প্রস্তুত হয়ে যায়। আপনি এরপরই এটি সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে এটি সংগ্রহ করতে হলে আপনাকে আবেদন রশিদ বা অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন নম্বর নিয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে যেতে হবে। একইসাথে মূল কাগজপত্র ও পরিচয়পত্র সঙ্গে রাখুন। চেষ্টা করবেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই সনদটি সংগ্রহ করার।
এছাড়া দেখে নিনঃ
- জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট করার নিয়ম
- অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন
- জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম ২০২৫ দেখুন
- জন্ম নিবন্ধন পসিবল ডুপ্লিকেট সমস্যার সমাধান ২০২৫, দেখে নিন
Birth Certificate Online Application
অনলাইন জন্ম সনদ বর্তমান সময়ে অতি দরকারি হয়ে উঠেছে কারণ এটি একজন মানুষের নাগরিকত্বের মূল প্রমাণপত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। মূল কথা সন্ম সনদ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা যায় না। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ নানা কাজে এই ডকুমেন্টটির প্রয়োজন হয়। শুরুর দিকে এবং কয়েক বছর পর্যন্ত জন্ম সনদের আবেদন হাতে লিখে করতে হলেও এখন তা অনলাইনেই করা সম্ভব। অনলাইন জন্ম সনদ সহজে যাচাইযোগ্য, দ্রুত প্রাপ্তিযোগ্য এবং সুরক্ষিত হওয়ায় এটি জালিয়াতি ও তথ্য বিকৃতির ঝুঁকি কমায়।
নাগরিকরা অনলাইনেই আবেদন করে জন্ম সনদ সংগ্রহ করতে পারেন, ফলে সময় ও খরচ দুই-ই বাঁচে। বিশেষ করে বিদেশে পড়াশোনা বা ভ্রমণের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জন্ম সনদ বাধ্যতামূলক হওয়ায়, অনলাইন জন্ম সনদের প্রয়োজনীয়তা আরও বেড়ে গেছে। তাছাড়া এখন যেসব ক্ষেত্রে জন্ম সনদ প্রয়োজন হয় সেসব ক্ষেত্রে ডিজিটাল জন্ম সনদই চাওয়া হয়।
FAQs
কীভাবে বুঝবেন আপনার জন্ম নিবন্ধন আবেদন সফল হয়েছে?
জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন আবেদন সফল হয়েছে কিনা তা বুঝতে হলে প্রথমে আবেদন শেষে পাওয়া ট্র্যাকিং নম্বরটি সংরক্ষণ করতে হবে। এরপর www.bdris.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে “আবেদন অনুসন্ধান” অপশনে ক্লিক করে ট্র্যাকিং নম্বর ও জন্ম তারিখ দিয়ে আপনার আবেদন কোন পর্যায়ে আছে তা চেক করতে পারবেন। স্ট্যাটাস যদি Approved বা Delivered দেখায়, তবে বুঝবেন যে আপনার আবেদন সফল হয়েছে।
জন্ম নিবন্ধন আবেদন কখন করা উচিৎ?
জন্ম নিবন্ধনের আবেদন যেকোনো সময়েই করা যায়। তবে এটি জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে করাই ভালো কারণ সে সময়ত এটি স্বাভাবিক আবেদন হিসেবে গণ্য হয় এবং দ্রুত সম্পন্ন হয়। ৪৫ দিনের পর যারা আবেদন করেন আবেদন করলে তা বিলম্বিত জন্ম নিবন্ধন হিসেবে ধরা হয় এবং অতিরিক্ত কিছু নথিপত্র জমা দিতে হয়। বিলম্বিত আবেদন প্রক্রিয়া কিছুটা সময়সাপেক্ষ এবং যাচাই-বাছাইয়ের সময়ও বেশি লাগে।
শেষ কথা
আশা করছি জন্ম নিবন্ধনের জন্য অনলাইন আবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে পেরেছি। জন্ম নিবন্ধন আবেদন করার ক্ষেত্রে সঠিক উপায় অবলম্বন করা জরুরী। তাছাড়া সব তথ্য ঠিক ভাবে দিচ্ছেন কিনা সেটাও খেয়াল রাখা দরকার। তথ্যে গড়মিল হলে পরবর্তীতে ডুপ্লিকেট সমস্যা আসতে পারে। অথবা কর্তৃপক্ষ যাচাই বাছাই করার পর যদি মনে করেন যে তথ্য ঠিক নেই তাহলে আপনার আবেদন বাতিল হয়েও যেতে পারে।
তাই অতি সতর্কতার সাথে আপনাকে আবেদন করতে হবে। যাইহোক, আমরা এখানে প্রয়োজনীয় প্রায় সব বিষয়ই উল্লেখ করার চেষ্টা করছি। এরপরও যদি আপনাদের আরও কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ।