Birth Registration E-Payment

যারা প্রথমবার অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করেছেন অথবা সংশোধনের জন্য আবেদন করেছেন তাদেকে অনলাইনে এর ফি পেমেন্ট করতে হবে। তাই জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট করার নিয়মটি যদি আপনার জানা থাকে তাহলে ঘরে বসেই ফি পেমেন্ট করে দিতে পারবেন। জন্ম নিবন্ধন আবেদনের জটিলতা দূর করতে বর্তমানে আবেদন করা এবং ফি পেমেন্ট সবকিছুর জন্যই অনলাইন সিস্টেম রয়েছে।

যাইহোক, আপনি নতুন জন্ম নিবন্ধন সনদের আবেদন করুন আর সংশোধনের আবেদন করুন আপনাকে অবশ্যই অনলাইনে পেমেন্ট করতে হবে, আর আপনি সেটি নিজেই করতে পারবেন। তাহলে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে আজকের এই লেখাটিতে আমরা কি সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি! হ্যাঁ, আমরা জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট করার নিয়ম সম্পর্কেই বিস্তারিত আলোচনা করবো এখানে।

জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট করবেন কিভাবে?

জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট করার একাধিক উপায় রয়েছে, তাই আপনি আপনার সুবিধামত যেকোনো উপায়েই পেমেন্ট করতে পারবেন। প্রথমটি হচ্ছে অনলাইনে ফি পরিশোধ করা এবং সরাসরি নিবন্ধকের কার্যালয় গিয়ে ফি পরিশোধ করা। অনলাইনে আপনি ঘরে বসেই ফি পরিশোধ করতে পারবেন। তবে কার্যালয়ে গিয়েও কাজটি করতে পারেন, যেটাতে আপনার সুবিধা হয়।

জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট করার সুবিধা

জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট করার নিয়মটি চালু হয় ২০২৩ সালে। অল্পদিন আগে চালু হলেও এই সিস্টেমটি গ্রাহকদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে কারণ এটি সবথেকে সুবিধাজনক এবং নিরাপদ পেমেন্ট পদ্ধতি। এমনকি টাকা পেমেন্টের জন্য আপনাকে কোথাও যেতেও হবেনা, এতে সময়ও বাঁচে। পূর্বে ম্যানুয়াল পেমেন্টের ক্ষেত্রে বেশ দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।

কিছু অসাধু ইউপি সচিব আবেদনকারীদের কাছ থেকে প্রয়োজনের থেকে বেশি ফি নিতো। বর্তমানে অনলাইন সিস্টেম হওয়ার কারণে কেউ আর বেশি ফি নেয়ার কোন সুযোগ নেই, কেউ চাইলেই অতিরিক্ত টাকা নিতে পারবেনা। তাই গ্রাহকরা মনে করেন যে অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমটি ফি সংক্রান্ত দুর্নীতিকে পুরোপুরি বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে।

এছাড়া মনে করুন আপনি সদ্য জন্মানো বাচ্চার জন্ম নিবন্ধন আবেদন করেছেন এবং সেটির ফি প্রদান করতে চাইছেন, সেক্ষেত্রে যদি কোন পর্যায়ে কত ফি দিতে হয় বা আদৌ ফি লাগে কিনা সেটা যদি আপনার না জানা থাকে তাহলে অফ্লাইন পেমেন্টে আপনার কাছ থেকে বেশি টাকা নিলেও আপনি বুঝতে পারবেন না। এক্ষেত্রে ই পেমেন্ট সবথেকে নির্ভরযোগ্য একটি উপায় হিসেবে বিবেচিত হয়।

জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট

জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট করার নিয়মঃ 

জন্ম নিবন্ধন পেমেন্ট করতে হলে আপনাকে এটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে করতে হবে। নিচের কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলেই আপনি এখনই আপনার জন্ম নিবন্ধন পেমেন্ট করতে পারবেনঃ

ধাপ ১ঃ প্রথমে আপনার স্মার্টফোন থেকে জন্ম নিবন্ধন E-Service অফিসিয়াল ওয়েবসাইট https://eservices.bdris.gov.bd/ এ প্রবেশ করুন।

ধাপ ২ঃ এরপর “ই পেমেন্ট” অপশনে যান এবং পেমেন্টের ধরন নির্বাচন করুন। এক্ষেত্রে নতুন জন্ম নিবন্ধনের আবেদনের ফি পরিশোধের জন্য “জন্ম নিবন্ধন আবেদন” অপশনে ক্লিক করুন।

ধাপ ৩ঃ একইভাবে সংশোধন আবেদনের ফি পরিশোধ করতে চাইলে আপনাকে “জন্ম তথ্য সংশোধনের আবেদন” অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে।

ধাপ ৪ঃ এরপর “আবেদনের আইডি” নামক বক্সে আবেদনের সময় যে আইডিটি পেয়েছিলেন সেটি বসাতে হবে।

ধাপ ৫ঃ এখন আপনার জন্ম নিবন্ধনে যেভাবে জন্ম তারিখটি দিয়েছিলেন ঠিক সেভাবেই জন্ম তারিখের ফরম্যাট সিলেক্ট করুন।

ধাপ ৬ঃ সবশেষে নিচের ক্যাপচাটি পূরণ করুন এবং “Search” বাটনে ক্লিক করুন।

নোটঃ উক্ত ধাপগুলো ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারলেই আপনি জন্ম নিবন্ধনের ই পেমেন্ট করতে সক্ষম হবেন। তবে মনে রাখবেন যে কোন ধাপে ভুল করলে কিন্তু আপনি পেমেন্ট করতে পারবেন না। তাই সঠিকভাবেই ধাপ গুলো সম্পন্ন করুন।

জন্ম নিবন্ধন ফি পেমেন্টের ক্ষেত্রে কোন বিষয় গুলো অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে?

অনলাইনে যখন আপনি জন্ম নিবন্ধন ফি পেমেন্ট করবেন তখন অবশ্যই কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। এই বিষয়গুলোতে ভুল করলে আপনি ফি পেমেন্টে ব্যর্থ হতে পারেন। কাজেই, নিচের পয়েন্ট গুলো অবশ্যই মনে রাখবেনঃ

১। আপনি যেই আইডি ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশন করেছিলেন ঠিক সেই একই আইডি ব্যবহার করেই আপনাকে পেমেন্ট করতে হবে।

২। যেহেতু আপনি অনলাইনেই পেমেন্ট করবেন সেহেতু যে ডিভাইস দিয়ে আপনি পেমেন্ট করতে চাইছেন সেটাতে ভালো ইন্টারনেট কানেকশন আছে তা নিশ্চিত করুন। ইন্টারনেট যদি দুর্বল থাকে তাহলে এমন হতে পারে যে আপনার পেমেন্ট অসম্পূর্ণ দেখাচ্ছে কিন্তু কিন্তু ঠিকই আপনার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিয়েছে।

৩। পেমেন্ট সম্পন্ন হলে অবশ্যই চালান কপিটি প্রিন্ট করে নিবেন কারণ এটি প্রমাণ হিসেবে পরবর্তীতে কোন দরকারে কাজে আসতে পারে।

একটি কথা এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট সিস্টেম চালু হবার পর থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় সময়ই সার্ভারের সমস্যা হয়ে থাকে। তাই হয়তো সার্ভার জটিলতায় আপনাকে ইউনিয়ন পরিষদে/ সিটি কর্পোরেশন কার্যালয়ে গিয়েই ফি দিতে হতে পারে।

জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফি কত?

জন্ম নিবন্ধন আবেদন বা সংশোধন ফি সবার ক্ষেত্রে এক হয়না। বিশেষ করে নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে বয়স বিবেচনায় ফি কম বেশি হয়ে থাকে। এজন্য ফি পেমেন্ট করার আগে কোন পর্যায়ে কত টাকা ফি দিতে হয় তা জেনে রাখা উচিৎ। এখানে আমরা বয়সভেদে ফি গুলো উল্লেখ করছি যাতে আপনারা এক্ষেত্রে প্রকৃত ধারনা পেতে পারেন।

নিবন্ধন এবং সংশোধন (বয়সভেদে) ফি এর পরিমাণ
নিবন্ধনকারী (বয়স ০ থেকে ৪৫ দিন পর্যন্ত) কোন ফি লাগবেনা (ফ্রি)
নিবন্ধনকারী (বয়স ৪৫ দিনের পর থেকে ৫ বছর বয়স) ২৫ টাকা
নিবন্ধনকারী (বয়স যদি ৫ বছরের উপরে হয়) ৫০ টাকা
তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে ১০০ টাকা
জন্ম তারিখ ছাড়া যদি পিতার নাম, মাতার নাম, ঠিকানা, ইত্যাদি তথ্য সংশোধনের জন্য ৫০ টাকা
ইংরেজি ও বাংলা উভয়ইভাবে তথ্য সংশোধনের পর বা সনদের কপি পেতে হলে বিনামূল্যে (ফ্রি)
ইংরেজি ও বাংলা উভয়ই ভাষায় জন্ম সনদ বা সার্টিফিকেটের নকল পেতে হলে ৫০ টাকা

জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্টে করতে আবেদনকারীদের ভোগান্তি!  

জনসাধারণের ভোগান্তি কমাতেই মূলত ই পেমেন্ট পরিষেবা চালু করা হয় কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এই সিস্টেমেও কিছু সমস্যার কারণে জনসাধারণ আরও বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। অনেকসময়ই দেখা যায় যে নিবন্ধন আবেদনকারী ফি পেমেন্টের সময় ওয়েবসাইট এ ঢুকতে পারেন না কারণ অধিকাংশ সময় ওয়েবসাইট ডাউন থাকে।

দেশের প্রায় সকল প্রান্তেই লোকেরা এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। সিস্টেমটি চালু হয় ২০২৩ সালে কিন্তু এখনো পর্যন্ত ওয়েবসাইট সচল্ভাবে কাজ না করার কারণে আবেদনকারীরা সুবিধা পাচ্ছেন না। তবে ওয়েবসাইট প্রতিনিয়তই আপডেট করা হচ্ছে যাতে জনসাধারণ এটির সম্পূর্ণ সুবিধা পেতে পারেন। আমরা আশা করছি এই সমস্যাটির দ্রুত সমাধান হবে।

শেষ কথা

আজ আমরা এই লেখাটির মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট করার নিয়ম সম্পর্কে যতটা সম্ভব জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করছি এখন আপনি সহজেই আপনার ফি পেমেন্ট করতে সক্ষম হবেন। তবে এক্ষেত্রে আমরা দুইটি উপায় উল্লেখ করেছি – একটি অনলাইনে আরেকটি অফলাইনে অর্থাৎ সরাসরি নিবন্ধকের কার্যালয়ে গিয়ে। আগেই বলেছি যে অনলাইনে পেমেন্ট করতে গিয়ে অনেকেই ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন, তবে সার্ভারজনিত জটিলতা না থাকলে আপনি ঘরে বসেই পেমেন্ট করতে পারবেন।

অন্যথায় আপনাকে কার্যালয়ে গিয়েই ফি পেমেন্ট করতে হবে। এছাড়া নিবন্ধনকারীর বয়স বিবেচনায় ফি কম বেশি হয় এবং যিনি নিবন্ধন সনদ সংশোধন করতে চান তাঁর খেত্রেও তথ্য ভেদে আলাদা ফি প্রদান করতে হয়। আমরা প্রয়োজনীয় প্রতিটি বিষয়ই উপরে আলোচনা করেছি, এরপরও যদি আপনার আর কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে আমাদেরকে জানাতে ভুলবেন না। আমরা যথাসাধ্য উত্তর দেয়ার চেষ্টা করবো।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *