জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম

Birth registration cancelled

আপনি কি আপনার জন্ম সনদটি বাতিল করতে চাচ্ছেন? তাহলে নিঃসন্দেহে এই লেখাটি আপনার জন্য কারন আজ আমরা এখানে জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাতে চলেছি। আপনারা সবাই জানেন যে জন্ম সনদ একটি অতি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট কিন্তু তারপরও কখনও অনিবার্য কারণবশতঃ এটি বাতিল করার দরকার হয়ে পড়ে। যেমন, কখনও কখনও জন্ম নিবন্ধন ডাবল হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে এটি বাতিল করা প্রয়োজন, অন্যথায় আপনি সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। কাজেই জন্ম সনদ বাতিল করার সঠিক নিয়ম যেমন জানা প্রয়োজন, তেমনি কি কি কারণে এটি বাতিল করতে হতে পারে তাও জেনে রাখা আবশ্যক।

আজকের আর্টিকেল এ আমরা আপনাদেরকে জন্ম সনদ কিভাবে বাতিল করতে হয় তা দেখাবো এবং একইসাথে এটি বাতিল করার কারণগুলো সম্পর্কেও অবহিত করার চেষ্টা করবো। মোটকথা আপনি যাতে এই বিষয়ে দরকারি সব তথ্যই পেতে পারেন সেজন্যই আমাদের আজকের লেখাটি। তাই অনুরোধ আর্টিকেল টির প্রতিটি অংশ খুব মন দিয়ে পড়ুন।

জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার কারণ

জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার উপায় জানার আগে এটি জেনে নেয়া দরকার যে কেন সনদটি বাতিল করার প্রয়োজন হয়। অনেকেই সব কারণ জানেন না। হয়ত এটাও জানেন না যে এই সংক্রান্ত আইনও রয়েছে যেখানে পরিস্কার ভাবে কিছু অনিবার্য কারণে জন্ম সনদ বাতিল করার কথা বলা হয়েছে, অন্যথায়

উক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে।

আপনার যদি একাধিক জন্ম সনদ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই একটি রেখে বাকিটা বাতিল করে দিতে হবে। সার্ভারে যদি আপনার একের অধিক জন্ম সনদ থাকে এবং সরকার যদি তা বুঝতে পারে তাহলে আপনি আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন।

See also  অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন (Birth Certificate Correction Online)

জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিল করতে কি কি প্রয়োজন?

জন্ম সনদ বাতিল করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রমাণ পেশ করতে হবে। এগুলো দাখিল করা ছাড়া বাতিল করা সম্ভব হবেনা। কারণ উপযুক্ত প্রমাণ দাখিল করা ছাড়া যদি এটি বাতিল করার নিয়ম থাকে তাহলে কেউ চাইলেই অসৎভাবে শত্রুতা করে অন্যের সনদ বাতিল করে দিতে পারবে। তাই জেনে নিন কি কি ডকুমেন্টস আপনার দরকার হবেঃ

১। প্রথমেই আপনার দরকার আপনার জন্ম সনদের ১৭ ডিজিটের জন্ম সনদ নাম্বারটি

২। ডিজিটাল জন্ম সনদে আপনার যে জন্ম তারিখটি আছে সেটি প্রয়োজন হবে।

৩। আপনার নামে যে একাধিক জন্ম সনদ আছে তাঁর যেকোনো প্রমাণপত্র।

৪। এগুলো ছাড়াও আরও কিছু প্রমাণ প্রয়োজন হতে পারে, সেটা পেতে হলে নিবন্ধন অফিসে যোগাযোগ করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম

জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিল করার জন্য অনলাইনে কোন প্রচলিত উপায় নেই। তাই আপনি চাইলেই অনলাইনে বাড়িতে বসে এটি করতে পারবেন না। তাই আপনাকে এখনো এটি ম্যানুয়ালিই করতে হবে। প্রথমে আমরা উপরে যে দরকারি ডকুমেন্টস গুলোর ব্যাপারে বলেছি সেগুলো সাথে রাখতে হবে। এরপর আপনি যে পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন অথবা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম নিবন্ধনটি সংগ্রহ করেছিলেন সেখানে এই পেপার গুলো সাথে নিয়ে যেতে হবে।

এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে নিজে যেতে হবে, অন্য কাওকে পাঠালে হবেনা। কারণ সেখানে যাওয়ার পর আপনার জন্ম নিবন্ধন যে ডাবল রয়েছে তাঁর প্রমাণ আপনাকে দিতে হবে এবং সেজন্য সশরীরে উপস্থিত হওয়া জরুরী। মনে রাখবেন সনদ বাতিল করার প্রথম শর্তই হচ্ছে এটির যে একাধিক সংখ্যা রয়েছে। এটি প্রমাণ হওয়ার পরই মূলত আপনি বাতিল করার প্রক্রিয়ায় যেতে পারবেন।

যাইহোক, কর্মকর্তাদের কাছ যদি সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে তাঁরা আপনাকে একটি ফরম প্রদান করবে। অবশ্য আপনি চাইলে অনলাইন থেকেও ফরমটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। আবেদন ফরমটি আপনাকে সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে। নিচে আবেদন ফরমের লিঙ্কটি দিয়ে দিচ্ছি যাতে আপনারা এখান থেকেই ডাউনলোড করে নিতে পারেন। ডাউনলোড করার পর নিকটস্থ কোন দোকান থেকে এটি প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।

See also  নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে

জন্ম নিবন্ধন বাতিলের আবেদন ফরম

জন্ম নিবন্ধন বাতিলের আবেদন ফরম ডাউনলোড করুন 

আবেদন ফরম পূরণ করা হয়ে গেলে এর সাথে সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং প্রমাণাদি একত্র করে নিকটস্থ জনপ্রশাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে জমা দিতে হবে। এরপরের প্রক্রিয়াগুলো সব তাঁরাই সম্পন্ন করবেন। আপনার আবেদনপত্র এবং জমা দেয়া সকল কাগজ পর্যালোচনা করে যদি তাঁরা এটিকে বৈধ মনে করেন তাহলে অনলাইনে থাকা আপনার বাড়তি জন্ম নিবন্ধন সনদটি তাঁরা বাতিল করে দিবে।

জন্ম নিবন্ধন বাতিলের আবেদনঃ 

এখন আপনাদেরকে দেখাতে চলেছি যে কিভাবে জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিলের জন্য আবেদন ফরমটি পূরণ করবেন। ফরম পূরণ করা খুবই সহজ, তবে আপনারা যাতে কোন ভুল না করেন তাই ধাপে ধাপে দেখিয়ে দিচ্ছিঃ

ধাপ ১ঃ ফরমের প্রথম অংশেই আছে “জন্ম /মৃত্যু নিবন্ধন নং” অপশনটি। এখানে আপনাকে আপনার ১৭ ডিজিটের নিবন্ধন নাম্বারটি বসাতে হবে।

ধাপ ২ঃ এরপরের অংশে আপনাকে নিবন্ধনের তারিখটি সঠিক ভাবে বসাতে হবে।

ধাপ ৩ঃ এরপর সনদটি যার নামে নিবন্ধিত রয়েছে তাঁর নাম লিখতে হবে।

ধাপ ৪ঃ এই ধাপ টি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এখানে আপনি ৩ টি অপশন পাবেন। যেহেতু আপনি জন্ম নিবন্ধন বাতিল করতে চান সেহেতু আপনাকে ১ নং ঘরে বাতিল করার কারণটি বর্ণনা করতে হবে।

ধাপ ৫ঃ এখন আপনি কি কি কাগজ সংযুক্ত করছেন তা পর্যায়ক্রমে লিখুন। এরপর পরবর্তী অংশে আপনার স্বাক্ষরসহ অন্যান্য যে যে তথ্য চাওয়া হয়েছে তা সঠিকভাবে লিখুন।

ফরম পূরণ করা হয়ে গেলে এটি আবারো পড়ে দেখুন যে কোন তথ্য ভুল আছে কিনা। সবকিছু সঠিক থাকলে তারপর জমা দিন।

আরও দেখুনঃ অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন

জন্ম নিবন্ধন বাতিল করতে কি কোন ফি দিতে হয়?

এটি অনেকেরই প্রশ্ন যে জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিল করতে হলে আসলেই কোন ফি দিতে হয় কিনা। আসলে প্রজ্ঞাপনে এমন কিছু লেখা নেই, অর্থাৎ ধরেই নেয়া যায় যে এটি ফ্রী। তবে এখানে একটি কথা আছে, যেহেতু আপনাকে বিভিন্ন অফিসে গিয়ে কাজটি করতে হবে সেক্ষেত্রে সেইসব জায়গায় আপনাকে ফি দিতে হবে। কেউ একেবারে বিনামুল্যে কাজ করে দিবে না। তবে সম্ভবত ১০০ টাঁকার বেশি ফি দিতে হবেনা। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে ফি যেটাই হোক যতদ্রুত সম্ভব ডুপ্লিকেট সনদটি বাতিল করার চেষ্টা করুন নাহলে পরবর্তীতে বড় ধরনের আইনি জটিলতায় পড়তে হবে।

See also  নতুন ভোটার আবেদন করতে কি কি লাগে? আবেদন এর নিয়ম দেখুন

জন্ম সনদে তথ্য ভুল থাকলে কি এটি বাতিল করা উচিত?

জন্ম নিবন্ধন সনদে কোন তথ্য ভুল থাকলে সনদ বাতিল করার চেয়ে তথ্য সংশোধন করে নেয়া ভালো। যেহেতু তথ্য সংশোধন করার উপায় রয়েছে সেহেতু এটি বাতিল করার কোন প্রয়োজন নেই। এক্ষেত্রেও আপনাকে একইভাবে আবেদন করতে হবে।

জন্ম নিবন্ধন সনদ বাতিল হতে কত সময় লাগে?

জন্ম সনদ বাতিলের আবেদন করার পর সাধারণত ৩ থেকে ৫ কর্মদিবসের মধ্যেই এটি বাতিল করা হয়ে থাকে।

শেষ কথা

আশা করছি আপনাদেরকে জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম সম্পর্কে পুরোপুরি জানাতে পেরেছি। আমাদের মধ্যে কারো একাধিক জন্ম নিবন্ধন সনদ আছে কিনা তা অবশ্যই নিশ্চিত হওয়া দরকার। নিয়মানুযায়ী একজন ব্যক্তির শুধুমাত্র একটিই জন্ম সনদ থাকতে হবে। প্রচলিত আইনে বলা হয়েছে যে কোন ব্যক্তির যদি একাধিক জন্ম নিবন্ধন সনদ থাকে তাহলে তা বাতিল না করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তাহলে বুঝতেই পারছেন যে অপ্রয়োজনীয় জন্ম সনদ বাতিল করার গুরুত্ব কতটা! বাতিলের প্রক্রিয়টি অনলাইনের মাধ্যমে করা গেলে আরও ভালো হত। তবে এখনো অনলাইনে এর কোন সিস্টেম রাখা হয়নি। আশা করা যাচ্ছে ভবিষ্যতে কাজটি আরও সহজে করতে অনলাইন সিস্টেম চালু হবে।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *