জন্ম নিবন্ধন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যেটা সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন কাজে দরকার হয়। অনেকেই জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে গেলে ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন সমস্যা দেখায়। এর কারণ হচ্ছে সম্ভবত আপনার জন্ম নিবন্ধনটি আগে থেকেই সার্ভারে রয়েছে নয়তো কারো সাথে আপনার জন্ম সনদের তথ্যের মিল রয়েছে। একজন ব্যক্তির একাধিক জন্ম সনদ করার নিয়ম নেই, তাই সার্ভারে এই সিস্টেমটি চালু আছে।
তবে আপনাকে এই সমস্যা উত্তরণের উপায়ও জেনে রাখতে হবে। এজন্যই আজকে আমরা জন্ম নিবন্ধন পসিবল ডুপ্লিকেট সমস্যার সমাধান ২০২৫ সম্পর্কে আলোচনা করতে চলেছি। এই আর্টিকেল এ আমরা জন্ম নিবন্ধন ডুপ্লিকেট দেখানোর কারণ এবং সমাধান সম্পর্কে আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাবো।
জন্ম নিবন্ধন পসিবল ডুপ্লিকেট আসলে কি?
এটি এক ধরণের সমস্যা যেটা অনেকেই ফেস করে থাকেন। আপনি যখন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন আবেদন করতে যাবেন তখন যদি আবেদনটির বিপরীতে “Possible Duplicate” স্ট্যাটাস দেখায় তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার জন্ম নিবন্ধন বা এর কোন তথ্য ইতিমধ্যেই সার্ভারে রয়েছে। মোটকথা, এটি দেখানো হয় যখন সিস্টেম মনে করে যে একই ব্যক্তির জন্য একাধিক জন্ম নিবন্ধন নম্বর বিদ্যমান থাকতে পারে।
More than one person having the same Birth Registration number. Or one person has probably more than one Birth Registration number.
নিচের ছবির মত দেখাবে…
জন্ম নিবন্ধন পসিবল ডুপ্লিকেট দেখানোর কারণ কি?
জন্ম নিবন্ধন পসিবল ডুপ্লিকেট দেখানোর নানা কারণ থাকতে পারে যেটা আমরা আগেই বলেছি। চলুন আরও কিছু সম্ভাব্য কারণ সম্পর্কে জেনে নেয়া যাকঃ
১। একই তথ্য একাধিকবার নিবন্ধন থাকলে
একজন ব্যক্তির জন্ম নিবন্ধন থাকা সত্বেও আবার আবেদন করলে এমনটা হয়। অথবা কোন ব্যক্তির নাম, পিতা-মাতার নাম কাকতালিও ভাবে মিলে গেলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
২। পূর্বে নিবন্ধিত সনদের তথ্যের সাথে মিল থাকলে
কোনো ব্যক্তি যদি আগে থেকেই জন্ম নিবন্ধনে নিবন্ধিত থাকে এবং নতুন করে আবার আবেদন করে, তাহলে সিস্টেম পূর্ববর্তী রেকর্ডের সাথে মিল খুঁজে পেয়ে “Possible Duplicate” দেখাতে পারে।
৩। তথ্যগত ভুল বা সামান্য পরিবর্তন হলে
যদি নামের বানান, জন্মতারিখ বা অন্য কোনো তথ্য সামান্য পরিবর্তন করে নতুন আবেদন করা হয়, তবে সিস্টেম সেটিকে পূর্বের রেকর্ডের সাথে মিলিয়ে ডুপ্লিকেট হিসেবে চিহ্নিত করতে পারে।
৪। একাধিক নিবন্ধন নম্বর থাকলে
যদি কোনো ব্যক্তির জন্য আগে থেকেই একটি জন্ম নিবন্ধন নম্বর (BRC) ইস্যু করা থাকে এবং নতুন করে আরেকটি নম্বরের জন্য আবেদন করা হয়, তবে এটি ডুপ্লিকেট হিসেবে ধরা পড়বে।
৫। ডাটাবেসের কারিগরি সমস্যা থাকলে
কখনো কখনো জন্ম নিবন্ধন সিস্টেমের ত্রুটি বা কারিগরি সমস্যার কারণে ভুলভাবে “Possible Duplicate” স্ট্যাটাস দেখাতে পারে। সমস্যা যেটাই হোক না কেন আপনার চেক করে দেখা উচিৎ।
আরো দেখুনঃ জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম ২০২৫ দেখুন
জন্ম নিবন্ধন পসিবল ডুপ্লিকেট সমস্যার সমাধান ২০২৫
এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব তবে আপনাকে সঠিক উপায়টি জানতে হবে। এক্ষেত্রে ডুপ্লিকেট একই জেলার নাকি একই উপজেলার মধ্যে দেখাচ্ছে সেটা জানা জরুরী কারণ জেলায় হলে আপনাকে এক উপায়ে যেতে, আর উপজেলায় হলে অন্য উপায় অবলম্বন করতে হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে সমাধান করবেনঃ
একই জেলায় হলে করণীয়ঃ
জন্ম নিবন্ধন ডুপ্লিকেট যদি একই জেলার মধ্যে হয় তাহলে আপনাকে অথরাইজড ইউজার বা উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা উপ-পরিচালক এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এরপর তিনি এই বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান করবেন এবং তদন্ত সম্পন্ন করে সত্যতা যাচাই করবেন। পরবর্তীতে তিনি সংশ্লিষ্ট নিবন্ধন অফিসে যোগাযোগ করে এটি সমাধান করার চেষ্টা করবেন।
যদি একই জেলায় না হয় তাহলে করণীয়ঃ
যদি জন্ম নিবন্ধন ডুপ্লিকেট কপিটি যদি জেলায় না হয় সেক্ষেত্রে আপনাকে অন্য জেলায় যোগাযোগ করে অনুসন্ধান করতে হবে এবং কাজটি অবশ্যই প্রশাসনিক উপায়ে করতে হবে কারণ কেউ এ ধরণের কোন তথ্য আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে দিতে চাইবেনা। যদি অনুসন্ধান করার পরও এই বিষয়ে কোন তথ্য পাওয়া না যায় তাহলে এ পর্যায়ে আবেদনকারীর কাছ থেকে একটি অঙ্গীকারনামা নেয়া হয়।
আবেদনকারীকে ভালোভাবে জিজ্ঞাসা করে নিশ্চিত হওয়া হয় যে তিনি ইতিপূর্বে আর কোথাও জন্ম নিবন্ধন করেননি এবং অঙ্গীকারনামাতে এটাই লেখা থাকবে। এই অঙ্গীকারনামার সাথেই আবেদনটি মঞ্জুর করা হবে। তবে এটি ছাড়াও আপনি যে আগে কোন জন্ম নিবন্ধন করেননি তাঁর পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণাদিও জমা দিতে হবে। এছাড়া আরও কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হবে পরবর্তীতে।
ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন বাতিলের জন্য আবেদন
ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন বাতিলের জন্য আবেদন এর নমুনা পত্র, নিচে দেওয়া হলঃ
বরাবর
রেজিস্ট্রার জেনারেল
স্থানীয় সরকার বিভাগ
পরিবহন পুল ভবন ৯ম তলা
সচিবালয় লিংক রোড, ঢাকা-১০০০।
বিষয়: ডুপ্লিকেট জন্ম নিবন্ধন বাতিলের জন্য আবেদন।
জনাব,
সম্মান পূর্বক বিনীত নিবেদন এই যে, মোঃ জুলফিকার রহমান, জন্ম নিবন্ধন নং- ২০০১৩০৯০৪১১০১১২৭৮, জন্ম তারিখ- ২২/০৯/২০০১, পিতা- মোঃ আঃ রাজ্জাক মন্ডল, মাতা- মোস্যাঃ জাকিয়া সুলতানা সাকি, অঞ্চল-৪, ওয়ার্ড-১১, বর্তমান ঠিকানা- ১৬/১, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর- ১২০৭, স্থায়ী ঠিকানা- গ্রাম: কল্যাণপুর, ডাকঘর: নারহট্ট-৫৮৭০, থানা: কাহালু, জেলা: বগুড়া। উল্লেখ্য এই যে, অনলাইনে একই জন্মনিবন্ধন নং- ২০০১৩০৯০৪১১০১১২৭৮ দুইবার এন্ট্রি হওয়ায় তাহার নাম ও জন্ম তারিখের সাথে মিল হওয়ার কারণে ১টি জন্ম নিবন্ধন বাতিল করা আবশ্যক। শহার আবেদন নাম্বার–
অতএব, মহোদয়ের নিকট আকুল আবেদন এই যে, জন্ম নিবন্ধন নং ২০০১৩০৯০৪১১০১১২৭৮ এবং জন্ম তারিখ- ২২/০৯/২০০১, ইস্যু তারিখ: ০২/১২/২০১৪ ইং একই জন্মনিবন্ধন অনলাইনে এন্ট্রি থাকায় ১টি বহাল রেখে ১টি বাতিল করার জন্য মহোদয়ের নিকট বিনীত অনুরোধ করছি।
বি.দ্রঃ জন্ম নিবন্ধন নং এবং জন্ম তারিখ- আবেদনকারীর টা দিবেন।
দেখে নিনঃ জন্ম নিবন্ধন ই পেমেন্ট করার নিয়ম
জন্ম নিবন্ধন পসিবল ডুপ্লিকেট সমস্যার সমাধান করা না হলে কি হতে পারে?
জন্ম নিবন্ধন ডুপ্লিকেট সংক্রান্ত সমস্যাকে অনেকেই ছোট করে দেখতে পারেন। স্বাভাবিকভাবেই কেউ কেউ এটিতে গুরুত্ব দেন না, কিন্তু এই সমস্যার সমাধান করা না হলে আপনাকে বেশ কিছু জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে।
জন্ম নিবন্ধন পসিবল ডুপ্লিকেট সমস্যা সমাধান করা না হলে এটি ভবিষ্যতে বিভিন্ন আইনি ও প্রশাসনিক জটিলতার কারণ হতে পারে। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, পাসপোর্ট আবেদন, শিক্ষা সনদ গ্রহণ, ব্যাংক হিসাব খোলা এবং সরকারি-বেসরকারি যেকোনো সেবার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
যেহেতু সরকারি তথ্যভাণ্ডারে একজন ব্যক্তির একাধিক নিবন্ধন থাকা আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয়, তাই এটি শনাক্ত হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আবেদন বাতিল করতে পারে বা প্রমাণ চাইতে পারে।
এছাড়া যদি একাধিক জন্ম নিবন্ধন বিদ্যমান থাকে, তবে ভবিষ্যতে নাগরিকত্ব যাচাই, জমিজমার মালিকানা, উত্তরাধিকার সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিতে পারে। আপনারা হয়তো জেনে থাকবেন যে সরকারি নীতিমালার কারণে একজন নাগরিকের একাধিক নিবন্ধন থাকলে এটি প্রতারণা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং প্রশাসনিক তদন্তের সম্মুখীন হতে হতে হয়।
তাই যদি পসিবল ডুপ্লিকেট সমস্যা ধরা পড়ে তাহলে দ্রুত সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে এটি সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভবিষ্যতে কোনো জটিলতার সম্মুখীন হতে না হয়।
জন্ম নিবন্ধনের ডুপ্লিকেট সমস্যা এড়ানো যায় কি?
হ্যাঁ যায়। আপনারা একটু সতর্ক হলেই এই ধরণের সমস্যা এড়ানো যায় বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে আমরা কিছু পরামর্শ দিতে পারি আপনাকেঃ
- সন্তানের জন্মের পরপরই একবারই সঠিক তথ্য দিয়ে জন্ম নিবন্ধন করুন।
- যদি মনে হয় কোন ভুল হয়ে গেছে তাহলে নতুন করে নিবন্ধন না করে আগের নিবন্ধন সংশোধন করুন।
- নিবন্ধনের সময় নাম, জন্মতারিখ, পিতামাতা ও ঠিকানার তথ্য সঠিকভাবে দিন। ভুল তথ্য দিলে পরে সংশোধন করতে গেলে ডুপ্লিকেট সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- নতুন করে জন্ম নিবন্ধনের আগে bdris.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে চেক করুন যে আগেই কোনো নিবন্ধন করা হয়েছে কিনা।
- অনেকেই নাম বা জন্মতারিখ পরিবর্তন করতে নতুন জন্ম নিবন্ধন করে, যা অবৈধ। পরিবর্তনের জন্য তথ্য সংশোধনের আবেদন করুন।
- আপনার সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করতে গেলে পিতামাতার জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, হাসপাতালের জন্ম সনদ ইত্যাদির সাথে মিল রেখে তথ্য প্রদান করুন।
- জন্ম নিবন্ধন নম্বরটি যত্ন করে রাখুন যাতে জন্ম নিবন্ধন সনদ হারিয়ে গেলে নতুন করে নিবন্ধন করার প্রয়োজন না হয়।
- অনলাইনে বা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ/পৌরসভা অফিস থেকে সঠিক নিয়মে আবেদন করুন। এক্ষেত্রে ভুল হবার সম্ভাবনা থাকবে না।
শেষ কথা
আশা করছি জন্ম নিবন্ধন পসিবল ডুপ্লিকেট সমস্যার সমাধান ২০২৫সম্পর্কে আমরা আপনাদেরকে যাবতীয় তথ্য দিতে পেরেছি। জন্ম নিবন্ধনে এই ধরণের সমস্যা থাকলে আপনি এটিকে কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজেই ব্যবহার করতে পারবেন না। এজন্য আগে আপনাকে সনাক্ত করতে হবে যে ঠিক কোন কারণে ডুপ্লিকেট সমস্যা দেখাচ্ছে। সমস্যা সনাক্ত করার পর সঠিক উপায়ে এটি সমাহদানের চেষ্টা করতে হবে। ইতিমধ্যেই আমরা বলেছ যে কি ভাবে ডুপ্লিকেট সমস্যার সমাধান করবেন।
মনে রাখবেন অনলাইনে একই জন্ম নিবন্ধন একাধিকবার থাকলে বা এমন দেখালে আপনাকে আইনি জটিলতার মুখোমুখি হতে হবে। তাই সবথেকে ভালো হয় যদি যতদ্রুত সম্ভব সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করেন। যদি আপনাদের এই বিষয়ে আর কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে আমাদের জানাতে পারেন।