আপনি কি একজন সরকারি চাকুরীজীবী? তাহলে নিঃসন্দেহে আপনি জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার বিষয়টির সাথে অতি পরিচিত। সাধারণত প্রতি বছর জুলাই মাসের পর সরকারি চাকুরীজীবীরা তাদের এই জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করে থাকেন ফান্ডে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ জানতে। যাইহোক, এখনও এমন অনেকেই রয়েছেন যারা GPF ব্যালেন্স চেক করার সঠিক উপায় সম্পর্কে অবগত নন।
বিশেষ করে নতুন চাকুরীজীবীদের কাছে প্রায়শই এটি অজানা থাকে। আপনিও যদি এমন কেউ হন তাহলে আশা করা যায় এই লেখাটি আপনার জন্য অত্যন্ত উপকারী হবে কারণ এই আর্টিকেল এ আমরা আপনাদেরকে GPF Balance check করার সম্পূর্ণ এবং সহজ নিয়ম সম্পর্কে ধারণা দিতে চলেছি। তাহলে আর দেরী না করে চলুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করবেন।
জিপিএফ ব্যালেন্স কি?
GPF এর পূর্ণরূপ হচ্ছে ‘General Provident Fund’ যেখানে সরকারি চাকুরিজিবিদেরকে বাধ্যতামূলকভাবে মূল বেতনের একটি অংশ জমা রাখতে হয়। তবে আপনি কত অংশ জমা রাখতে চান সেটা আপনার উপরে। GPF এর জন্য সর্বনিম্ন ৫% থেকে সর্বোচ্চ ২৫% পর্যন্ত হার নির্ধারিত আছে। আপনি এই সীমার মধ্যে যেকোনো হারে আপনার ফান্ডে জমা করতে পারবেন।
আপনার জমাকৃত ফান্ডের উপরে সরকার সর্বোচ্চ ১৩% হারে লাভ দিয়ে থাকে। প্রতি বছর একবার অর্থাৎ জুলাই মাসের পরেই আপনি আপনার provident fund চেক করতে পারবেন এবং সেটি বাড়িতে বসেই। পূর্বে নিয়মটি আলাদা ছিলো কারণ তখন চাকুরীজীবীদেরকে স্ব-শরীরে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে উপস্থিত থাকতে হত ব্যালেন্স দেখার জন্য। তবে এখন নিয়ম আরও সহজতর হয়েছে কারণ আপনাকে আর কোথাও যেতে হবেনা কারণ শুধুমাত্র হাতের স্মার্টফোনটি ব্যবহার করেই যেকোনো জায়গা থেকে চেক করতে পারবেন কত জমা হয়েছে আপনার GPF এ।
কেন জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করবেন?
আপনার মনে হতে পারে যে প্রতি মাসে ফান্ডে তো জমা হচ্ছেই তাহলে এটি চেক করার দরকার কি। এসব ভেবে অনেকেই বিষয়টিকে ততটা গুরুতে দেন না কিন্তু যারা সরকারি চাকুরী করছেন তাদের সবারই সময়মত এটি চেক করে নেয়া উচিত। আর হ্যাঁ GPF balance check করার অবশ্যই কিছু প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
যেমন, আপনার অবসরকালীন জীবনের জন্য এ যাবত কত টাকা জমা হয়েছে সেটা জানতে পারবেন। এছাড়া আপনার জিপিএফ অ্যাকাউন্ট এ কোন সমস্যা হয়েছে কিনা সেটাও জানা সম্ভব একমাত্র অ্যাকাউন্ট চেক করার মাধ্যমেই। একইসাথে আপনি আপনার জমাকৃত অংশের উপর কত হারে সুদ প্রাপ্ত হচ্ছেন সেটা জানতে হলেও আপনাকে ব্যালেন্স চেক করতে হবে।
জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার নিয়মঃ
GPF balance চেক করার সবথেকে স্বীকৃত উপায় হচ্ছে ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে দেখা। যাইহোক, আপনাদেরকে আর অপেক্ষায় রাখতে চাইনা। এখন আপনারা জানবেন কিভাবে অনলাইনে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করা যায়। এই উপায়টির মাত্র অল্প কয়েকটি ধাপ রয়েছে, কাজেই এগুলো অনুসরণ করা কঠিন কিছু নয়। নিচে ধাপ গুলো বর্ণনা করা হলোঃ
ধাপ ১ঃ প্রথমে, আপনার মোবাইল থেকে Mozila Firefox বা Chrome যেকোনো একটি ব্রাউজার ওপেন করুন।
ব্রাউজার এর সার্চবারে www.cafopfm.gov.bd লিংকটি প্রবেশ করান এবং সার্চ করুন। সার্চ করার পর আপনি নিচের ছবির মত একটি পেজে প্রবেশ করবেন।
ধাপ ২ঃ একটু স্ক্রোল করে নিচের দিকে আসলে আপনি কয়েকটি অপশন দেখতে পাবেন। সেখান থেকে GPF information বাছাই করুন এবং Click Here বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩ঃ ক্লিক করার পর আপনার সামনে একটি pop-up আসবে যেখানে NID/Smart ID এবং Phone No বসাতে হবে।
ধাপ ৪ঃ NID এর ক্ষেত্রে ১৭ ডিজিটের নম্বরটি বসাতে হবে এবং Smart ID এর ক্ষেত্রে ১০ ডিজিটের নম্বর বসাতে হবে।
ধাপ ৫ঃ সঠিকভাবে সবকিছু বসানো হয়ে গেলে Submit বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৬ঃ তথ্য সাবমিট করার পর আপনার ফোন নম্বরে একটি OTP কোড যাবে যেটা আপনাকে নির্ধারিত স্থানে বসাতে হবে। এরপর আবারো ‘Submit’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৭ঃ এখন আপনার সামনে একটি পেজ আসবে যেখানে আপনার নাম, এনআইডি নম্বর এবং জিপিএফ এর হিসাব নম্বর সহ জিপিএফ ব্যালেন্স সংক্রান্ত সকল তথ্য দেখতে পাবেন।
যে তথ্য গুলো আপনি দেখতে পাচ্ছেন যেগুলো আপনি চাইলে ডাউনলোড করে রাখতে পারেন। একই পেজের উপরের ডানপাশে Print অপশনটি দেখতে পাবেন। এখানে ক্লিক করে আপনি এই কপিটি ডাউনলোড করে রাখতে পারবেন। এছাড়া প্রিন্টও করে রাখতে পারেন। পরবর্তীতে যখন GPF এর টাকা উত্তোলন করার প্রয়োজন হবে তখন এই প্রিন্ট কপিটি ব্যবহার করতে পারবেন।
মোবাইল অ্যাপ দিয়ে কিভাবে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করবেন?
ওয়েবসাইট ছাড়াও মোবাইল অ্যাপ এর মাধ্যমেও আপনি চেক করে নিতে পারেন আপনার GPF balance. Google Play Store বা App Store এ আপনি ‘My GPF’ নামে একটি অ্যাপ পাবেন যেটা দিয়েও সহজে ফান্ড চেক করা যায়। আশা করছি নিচের ধাপগুলো আপনার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবেঃ
- প্রথমে Google Play Store বা App Store থেকে কাংখিত অ্যাপটি ডাউনলোড করে নিন।
- এরপর রেজিস্ট্রেশন অপশনে ক্লিক করুন। এখানে আপনাকে ফোন নম্বর এবং ভোটার আইডি নম্বর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
- রেজিস্ট্রেশন করা হয়ে গেলে Login এ ক্লিক করুন।
- ভোটার আইডি ফোন নাম্বার দিয়ে লগ ইন করুন।
- অ্যাকাউন্ট এ ঢুকে GPF Balance নামে একটি অপশন পাবেন, এতিতে ক্লিক করুন।
- পরিশেষে আপনি আপনার GPF ব্যালেন্স দেখতে পারবেন।
জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার কি অন্য কোন উপায় আছে?
হ্যাঁ নিশ্চয়ই! ওয়েবসাইট এবং অ্যাপ এর মাধ্যমে চেক করা ছাড়াও আরেকটি উপায়ে আপনি কাজটি করতে পারবেন সেটি হচ্ছে ইএফটি। এ ক্ষেত্রে আপনাকে ইএফটি-এর ট্রান্সজেকশন লগ দেখতে হবে। যখন আপনি এই লগ দেখবেন তখন এটিতেই জিপিএফ ব্যালেন্স দেখা যাবে।
আপনি যদি অন্যান্য উপায়গুলোর দ্বারা ব্যালেন্স দেখতে না চান তাহলে এই উপায়টি আশা করা যায় আপনার জন্য সহায়ক হবে। এছাড়া প্রতি বছর জুলাই মাসের শেষে আর্থিক বছরের সমাপ্ত হবে এবং সেই সময় আপনার আপনার উপজেলা হিসাব রক্ষক আপনাকে জমাকৃত ফান্ডের একটা স্লিপ পাঠাবেন। এই স্লিপ থেকেই আপনি ব্যালেন্সের বিস্তারিত সম্পর্কে জানতে পারবেন।
জিপিএফ ব্যালেন্স চেক করার বিষয়ে কিছু দরকারি তথ্যঃ
GPF balance check করার ক্ষেত্রে আপনারা যাতে কোন ভুল পদক্ষেপে না যান সেজন্য আমি কিছু পরামর্শ দিতে চাই। যেহেতু আমি ইতিমধ্যেই বলেছি যে আপনি আপনার মোবাইল দিয়েই খুব সহজেই ব্যালেন্স দেখতে পারবেন, এমনকি ধাপে ধাপে উপায়টি উল্লেখও করেছি। এটিই ব্যালেন্স চেক করার সবথেকে সহজ উপায়। আপনি যদি প্রতিটি ধাপ সঠিকভাবে অনুসরণ করেন তাহলে নিশ্চিতভাবে ফান্ডের পরিমাণ দেখতে সক্ষম হবেন।
আরেকটি কথা না বললেই নয়, ফান্ড দেখার ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার ভোটার আইডি নম্বর এবং ফোন নম্বর প্রদান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই এই তথ্যগুলো সঠিকভাবে প্রদান করুন কারণ ভুল তথ্য দিয়ে কোনভাবেই আপনি ব্যালেন্স চেক করতে পারবেন না। তাই তাড়াহুড়া না করে ধীরেসুস্থে কাজটি করুন।
উপসংহার
জিপিএফ ব্যালেন্স চেক (GPF Balance Check) নিয়ে অনেক কথাই বলা হলো। আসলে জিপিএফ ব্যালেন্স চেক একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটা সম্পর্কে একজন সরকারি চাকুরীজীবীর যথেষ্ট ধারণা রাখা উচিত। যেহেতু এখানে ফান্ড চেক করার একটি ব্যাপার রয়েছে সেহেতু নিজে সহজে কিভাবে চেক করবেন সে সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ জেনে রাখা আবশ্যক। ইতিমধ্যেই উপরে GPF Balance Check করার কয়েকটি উপায় বর্ণনা করা হয়েছে।
আপনাকে মনে রাখতে হবে যে শুধু ব্যালেন্স জানার জন্যই নয় বরং আপনার অ্যাকাউন্টটি ঠিকঠাক আছে সেটা দেখার জন্যও আর্থিক বছরের শেষে একবার এটি চেক করা উচিত। আশা করছি আপনার general provident fund check করার সংক্রান্ত জটিলতা দূর করতে সক্ষম হয়েছি। তবে এরপরও যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে বা কোন তথ্য নিয়ে দ্বিধায় থাকেন তাহলে কমেন্ট বক্সের মাধ্যমে তা আমাদের জানিয়ে দিন।