ইতালি স্পন্সর ভিসা ২০২৫ এর কার্যক্রম ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই আপনি যদি স্পন্সর ভিসার ইতালি যেতে চান তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি আপনার জন্য। মূলত ইতালি স্পন্সর ভিসা হচ্ছে এমন একটি ভিসা যার মাধ্যমে ইতালির একজন নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা বিদেশ থেকে কারো ভ্রমণ বা থাকার দায়িত্ব গ্রহণ করে ভিসার আবেদনকে সমর্থন করেন।
এটি প্রধানত পরিবার পুনর্মিলন, পর্যটন বা ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহৃত হয়। ইতালি স্পন্সর ভিসা মূলত ভিসা আবেদনকারীর আর্থিক ও থাকার দায়িত্ব নিশ্চিত করে সহজতর করে তোলে। এ পর্যায়ে আমরা ইতালি স্পন্সর ভিসার যাবতীয় বিষয়াদি এই লেখাটির মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
ইতালি স্পন্সর ভিসা কি?
ইতালি স্পন্সর ভিসার আবেদন করার পদ্ধতি দেখানোর আগে আমরা স্পন্সর ভিসা সম্পর্কে একটু জানাতে চাই। আসলে ইতালিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যখন কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন হয় তখন তাঁরা সরকারের কাছে তাঁদের কর্মীর চাহিদা উল্লেখ করে ভিসা অনুমতি চেয়ে আবেদন করে থাকে। সরকারের অনুমোদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানগুলো বিভিন্ন দেশের কর্মীদেরকে এই ভিসা গুলি দিয়ে থাকে।
এগুলোই মূলত স্পন্সর ভিসা। এটিকে আমরা ওয়ার্ক পারমিট ভিসাও বলে থাকি। ২০২৫ এর স্পন্সর ভিসার আবেদন শুরু হয়ে গিয়েছে, তাই আমরা ভিসার আবেদন করার উপায়টি এই আর্টিকেল এর মাধ্যমেই দেখাতে চেষ্টা করবো।
কেন স্পন্সর ভিসায় ইতালি যাবেন?
আপনি যদি স্পন্সর ভিসায় ইতালি যান তাহলে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা পাবেন। এমনিতেও ওয়ার্ক পারমিট ভিসা নিয়ে যারা দেশটিতে যান তাঁরা নানা রকম সুবিধা পেয়ে থাকেন। নিচে প্রধান সুবিধা গুলো উল্লেখ করা হলো আপনাদের জ্ঞাতার্থেঃ
১। আপনি যদি ইতালিতে দীর্ঘদিন কাজের সুবিধা পেতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে স্পন্সর ভিসা নিয়েই ইতালি যেতে হবে। ভালো কাজের সুবিধার পাশাপাশি দীর্ঘসময় কাজের সুযোগও রয়েছে সেখানে আপনার জন্য।
২। আপনি স্পন্সর ভিসায় পড়াশোনার জন্যও যেতে পারবেন ইতালিতে। সেখানে যাওয়ার পর পার্ট টাইম কাজের সুযোগ রয়েছে আপনার জন্য।
৩। ইতালিতে দীর্ঘদিন থাকতে চান? তাহলে স্পন্সর ভিসায় যান সেখানে কারণ এই এই ভিসা নিয়ে যারা যায় তাঁদের অনেকদিন থাকতে পারার সুযোগ রয়েছে।
৪। যদি আগে থেকে আপনার পরিবারের কেউ ইতালিতে অবস্থান করে থাকেন তাহলে আপনি তাঁর সাথে থাকার সুযোগ পাবেন এই ভিসার মাধ্যমে।
৫। যারা ইতালির নাগরিকত্ব পেতে চান তাঁদের জন্য স্পন্সর ভিসা একটি দারুন সুযোগ। এই ভিসাধারীকে পরবর্তীতে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়।
আরো দেখুনঃ ফিনল্যান্ড কাজের ভিসা (আবেদন, বেতন, খরচ)
ইতালি স্পন্সর ভিসা কত টাকা লাগে?
ইতালি স্পন্সর ভিসার খরচ নির্ভর করে বিভিন্ন বিষয়ের উপর। যেমন— ভিসার ধরন, আবেদন প্রক্রিয়া, দালালের ফি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় খরচ। স্পন্সর ভিসার খরচ সাধারণত ৮ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে খরচ ১৪ লক্ষ টাকাও হতে পারে।
স্পন্সর ভিসার খরচের বিবরণ:
- ভিসা প্রসেসিং ফি: – ইতালি স্পন্সর ভিসার জন্য সাধারণত ভিসা প্রসেসিং ফি ৭০-৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এটি ভিসার আবেদন ফি এবং অন্যান্য প্রশাসনিক চার্জ অন্তর্ভুক্ত করে।
- ডকুমেন্ট প্রস্তুত খরচ: – ডকুমেন্ট ট্রান্সলেশন, নোটারাইজেশন, এবং অন্যান্য কাগজপত্র প্রস্তুত করতে ২০-৩০ হাজার টাকা প্রয়োজন হতে পারে।
- ট্রাভেল এজেন্ট বা দালাল ফি: – স্পন্সর ভিসার ক্ষেত্রে অনেকেই এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করেন। এতে ২ থেকে ৪ লক্ষ টাকা খরচ হয়।
- টিকিট ও বিমা খরচ: – ইতালিতে ভ্রমণের জন্য বিমানের টিকিট এবং ভ্রমণ বিমা বাবদ ১ লক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত প্রয়োজন হতে পারে।
- স্পন্সর লেটার এবং সংশ্লিষ্ট খরচ: – স্পন্সর লেটার সংগ্রহ এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় ফি বাবদ ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা খরচ হতে পারে।
- অন্যান্য খরচ: – কিছু ক্ষেত্রে মেডিকেল চেকআপ, ভিসা ইন্টারভিউ, এবং স্থানীয় প্রশাসনিক খরচ অন্তর্ভুক্ত হয়। এর জন্য ২০-৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হতে পারে।
ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদনের জন্য কি কি লাগে?
বাংলাদেশ থেকে যারা স্পন্সর ভিসায় ইতালি যেতে চাচ্ছেন তাঁদেরকে ভিসা আবেদনের জন্য অবশ্যই কিছু কাগজপত্র একত্র করতে হবে। এই কাগজপত্রের তথ্য গুলো আবেদন করার সময় ব্যবহার করতে হবে, আবার জমাও দিতে হবে। তাই নিচে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর তালিকাটি দেখে নিন, প্রয়োজনে লিখে রাখুনঃ
- আপনার ৬ মাস মেয়াদী একটি বৈধ পাসপোর্ট;
- জাতীয় পরিচয় পত্রের অরিজিনাল কপি;
- সদ্য তোলা সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড এর পাসপোর্ট সাইজের ছবি;
- বর্তমানে যেখানে কর্মরত আছেন সেখানকার প্রমাণপত্র, এক্ষেত্রে বৈধ আয়ের প্রমাণপত্রের কথা বলা হয়েছে;
- আপনার নিবন্ধন আইডি কার্ডের কপি;
- আপনি যে ইতালি স্পন্সর ভিসার আবেদন করেছেন সেই আবেদন ফরমটি;
- সবশেষে ইতালির ভাষা সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান থাকতে হবে।
ইতালি স্পন্সর ভিসার আবেদন করবেন কিভাবে?
ইতালি স্পন্সর ভিসা আবেদন করার ক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। আবেদন পূরণে কোথাও ভুল হলে আবেদন বাতিল হয়ে যেতে পারে এবং আপনার ইতালি যাওয়ার স্বপ্নের সমাপ্তি ঘটতে পারে। তাই নিচের ধাপ গুলো গুরুত্ব সহকারে অনুসরণ করুনঃ
প্রথমেই আপনাকে ইতালির সরকারি ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করতে হবে। এটি হচ্ছে https://www.vfsglobal.com লিঙ্ক।
ওয়েবসাইট এ প্রবেশের পর “Take Me To the Website” অপশনে যান এবং আপনার ভিসার ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন।
- ওয়েবসাইট এ প্রবেশের পর “Visa Types” অপশনে যান এবং আপনার ভিসার ক্যাটাগরি নির্বাচন করুন।
- এখন “How to Apply” ক্যাটাগরিতে গেলেই আবেদনের জন্য দরকারি তথ্য গুলো দেয়ার জায়গা পেয়ে যাবেন।
- যে তথ্য গুলো দেয়া প্রয়োজন সেগুল সঠিকভাবে দিয়ে আবেদন ফরমটি পূরণ করুন।
- এরপর আপনাকে ভিসার আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে। এটিও আপনি ওয়েবসাইট এর মাধ্যমেই করতে পারবেন।
- আবেদন ফরম পূরণ এবং ফি পরিশোধ করার পর ফরমটি প্রিন্ট করে ভিসা সেন্টারে গিয়ে জমা দিতে হবে।
ইতালি স্পন্সর ভিসার আবেদন করার ক্ষেত্রে কি কি বিষয় মনে রাখতে হবে?
ইতালি স্পন্সর ভিসার আবেদন করার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা অত্যন্ত জরুরি কারণ এগুলো আবেদন সফল করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। নিচে এই বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো:
- আপনার স্পন্সর ইতালির একজন বৈধ নাগরিক বা স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে।
- স্পন্সরের যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে, যেমন পর্যাপ্ত আয় এবং সঞ্চয়।
- স্পন্সরের কাছ থেকে একটি স্পন্সর লেটার সংগ্রহ করতে হবে, যেখানে তিনি আপনার ভ্রমণ এবং থাকার দায়িত্ব নেবেন বলে উল্লেখ থাকবে।
- ইন্টারভিউয়ের সময় আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং স্পন্সরের ভূমিকা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে হবে।
- প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ও সামাজিক অবস্থান এবং আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা রাখুন।
- সর্বশেষ, আপনার ভ্রমণের উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা সুস্পষ্ট রাখতে হবে।
শেষ কথা
আশা করছি, আপনারা ইতালি স্পন্সর ভিসা ২০২৫ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন উপরের আলোচনা থেকে। যারা ইতালি গমন করতে ইচ্ছুক তাঁরা স্পন্সর ভিসার মাধ্যমে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা নিয়েই দেশটিতে যেতে পারবেন। ইতালির মতো দেশগুলোতে অনেক ভিসার ক্ষেত্রে ভ্রমণের সময় আর্থিক দায়িত্ব এবং থাকার জায়গার প্রমাণ আবশ্যক। আর স্পন্সর ভিসা এসব ক্ষেত্রে খুবই সুবিধাজনক। তাই, আজই আবেদন করুক যদি আপনি আপনার স্বপ্নের দেশটিতে যেতে চান।