গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন গ্রেড তালিকা

Garment Workers Salary

গার্মেন্টস শ্রমিকরা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন কারণ তাদের তৈরি পোশাকগুলো বিদেশে রপ্তানি করে আমাদের দেশ প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে। পোশাক শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির ব্যাপারে অনেক আলোচনা সমালোচনা চলছিলো এবং সম্প্রতি তাদের বেতন এবং মজুরি গ্রেড বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে কত বাড়ানো হয়েছে তাদের বেতন সে ব্যাপারে অনেকেই জানতে আগ্রহী। এই আর্টিকেল এ আমি চেষ্টা করবো গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন গ্রেড তালিকা সম্পর্কে আপনাদেরকে অবহিত করতে।

আপনাদের সুবিধার্থে এখানে বেতন তালিকার PDF ফাইল দিবো যাতে আপনারা এটি ডাউনলোড করেও রাখতে পারেন। তাহলে, আর্টিকেল টি পুরো পড়ুন কারণ এখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো কভার করা হবে।

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির কারণ 

২০১৮ সালে পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরী নির্ধারিত ছিলো ৮০০০ টাকা এবং এটিই বহাল ছিলো। তবে এর পরবর্তী বছর গুলোতে নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে এবং সল্প মজুরীর শ্রমিকদের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি তো আছেই। অসাধু নেতারা বিভিন্ন উপায়ে সুযোগ সুবিধা নিয়ে টাকার পাহাড় বানালেও দেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরাই রয়ে গেছে বঞ্চিত।

আমাদের গোটা পোশাক শিল্পে প্রায় ৪০ লাখের মত মানুষ কাজ করছে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে টিকে আছে এই শিল্প। মূল্যস্ফীতি এবং নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে তারা যে কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছে তা লাঘব করতেই মূলত তারা এই যৌক্তিক দাবী উপস্থাপন করে।

মালিকপক্ষ ও সরকারের কাছে শ্রমিকরা বেছ কিছু দাবী উত্থাপন করে যেমন – নূন্যতম মজুরি ২২ থেকে ২৫ হাজার, ৬০ শতাংশ মহার্ঘভাতা চালু, রেশনিং ব্যবস্থা চালু, চিকিৎসা সেবা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, প্রতি বছর ইনক্রিমেন্ট বৃদ্ধি, শ্রমিক ছাঁটাই না করণ, বেকার শ্রমিকদের জীবিকা ভাতা প্রদান ইত্যাদি। বিষয়গুলো নিয়ে মালিকপক্ষ এবং সরকার আলোচনার মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর যৌক্তিক কারণ খুঁজে পায় এবং এর পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

See also  অনলাইনে বিদ্যুৎ বিল চেক - Online পল্লী বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ পদ্ধতি

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন গ্রেড তালিকাঃ 

আপনাদের জানার সুবিধার্থে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন গ্রেড তালিকা নিচে উপস্থাপন করা হলোঃ

শ্রমিক শ্রেণী বিভাগ গ্রেড-১ গ্রেড-২ গ্রেড-৩ গ্রেড-৪ গ্রেড-৫
মূল মজুরী  ৮,২০০ টাকা ৭,৮০০ টাকা ৭,৪০০ টাকা ৭,০৫০ টাকা ৬,৭০০ টাকা
বাড়ি ভাড়া ভাতা ৪,১০০ টাকা ৩,৯০০ টাকা ৩,৭০০ টাকা ৩,০৫২ টাকা ৩,৩৫০ টাকা
চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা ৭৫০ টাকা ৭৫০ টাকা ৭৫০ টাকা ৭৫০ টাকা
যাতায়াত ভাতা  ৪৫০ টাকা ৪৫০ টাকা ৪৫০ টাকা ৪৫০ টাকা ৪৫০ টাকা
খাদ্য ভাতা ১,২৫০ টাকা ১,২৫০ টাকা ১,২৫০ টাকা ১,২৫০ টাকা ১,২৫০ টাকা
সর্বমোট মজুরী  ১৪,৭৫০ টাকা ১৪,১৫০ টাকা ১৩,৫৫০ টাকা ১৩,০২৫ টাকা ১২,৫০০ টাকা

আরও দেখুনঃ অনলাইনে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম

সহকারী অপারেটর বেতন কাঠামো 

মূল মজুরী  ৬,৭০০ টাকা
বাড়ি ভাড়া ভাতা ৩,৩৫০ টাকা
চিকিৎসা ভাতা ৭৫০ টাকা
যাতায়াত ভাতা  ৪৫০ টাকা
খাদ্য ভাতা ১,২৫০ টাকা
সর্বমোট মজুরী  ১২,৫০০ টাকা

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতনের নতুন গেজেটঃ 

Download PDF

গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিতে কি শ্রমিকরা কি সন্তুষ্ট?

পোশাক শ্রমিকদের দাবী অনুযায়ী মজুরী ৫২-৫৬ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা করা হলেও প্রকৃতপক্ষে তা করা হয়নি। বাস্তবে বাড়ানো হয়েছে ২৫-২৮.৮৮ শতাংশ যেটাতে শ্রমিকরা তেমন সন্তুষ্ট হতে পারেনি। গত বছর ১১ই নভেম্বর নতুন মজুরী কাঠামো প্রণয়ন করা হয় যেটা চালু হয় ডিসেম্বর থেকেই। আগে শ্রমিকদেরকে ৭ টি গ্রেডে বেতন দেয়া হত এখন সেটি ৫ টি গ্রেডে দেয়া হয়। আমরা পর্যালোচনা করলেই দেখতে পাই যে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোর পোশাক শ্রমিকরা বেশ ভালো মজুরী পায় কিন্তু সে তুলনায় আমাদের দেশের শ্রমিকরা পায় অনেক কম। অথচ দেশের আয়ের একটা বড় অংশ আসে এই পোশাক খাত থেকে।

এইসব তৈরি পোশাক রপ্তানি করে মালিকরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন কিন্তু মাঝখান থেকে বঞ্চিত হয় এই পোশাক শ্রমিকরা। নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে ছিলেন এবং সে সময় শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে তাড়াহুড়া করেই শ্রম প্রতিমন্ত্রী ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা দেন ১২,৫০০ টাকা (মজুরি গেজেট, ১১ নভেম্বর, ২০২৩)। তবে এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই সাধুবাদ জানায়নি কারণ শ্রমিকদের যা দাবী ছিলো এটি তার তুলনায় অনেক কম।

See also  ৪০০+ আবেগী ফেসবুক আইডির নাম বাংলা ও ইংরেজিতে - Abegi Facebook ID Name

নতুন মজুরী কাঠামো কি সকল সেক্টরের পোশাক শ্রমিকের জন্য কার্যকর?

হ্যাঁ, বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যত গার্মেন্টস রয়েছে সবগুলোর শ্রমিকরা এই গেজেট অনুযায়ীই বেতন গ্রহণ করবেন। গেজেটে বলা হয়েছে যে প্রণীত বেতন কাঠামোর ব্যাপারে যদি কারোর আপত্তি থাকে তাহলে সে গেজেট প্রণয়নের ১৪ দিনের মধ্যে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারবেন।

শেষ কথা

গার্মেন্টস শ্রমিকরা মালিকপক্ষের কাছে একটি ন্যায্য মজুরী এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধা দাবী করেছিলেন। যদিও তাদের দাবী অনুযায়ী পুরোটা হয়নি তারপরও তারা কিছুটা সন্তুষ্ট যে তাদের মজুরী কিছু বাড়ানো হয়েছে। আসলে এইসব শ্রমিকরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অক্লান্ত পরিশ্রম করে পোশাক শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছেন। কাজেই, তাদের বাড়তি মজুরী দাবী কখনই অসঙ্গত নয়। আর এটা চিন্তা করেই কর্তৃপক্ষ তাদের বেতন ভাতা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়।

আশা করা যায়, এই আর্টিকেল থেকে আপনি নতুন প্রণীত গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন গ্রেড তালিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। গার্মেন্টস শ্রমিকদের প্রতি এমন সদয় আচরণে আমরা সাধারণ মানুষও বেশ আনন্দিত হয়েছি কারণ তাদের এটি প্রাপ্য। আমরা আশা করি এই মুহূর্তে মালিকপক্ষ বা সরকার তাদেরকে যে সুবিধাগুলো দিতে পারছেনা, ভবিষ্যতে সেগুলো দিবে এবং তা দ্রুত।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *