নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে

New voter registration

আপনি কি নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করার ব্যাপারে ভাবছেন? তাহলে আমি বলবো যে এই মুহূর্তে আপনি সঠিক স্থানে রয়েছেন কারণ এই টপিকটি আজকে আলোচনার মাধ্যমে এই বিষয়ক খুব দরকারি জিনিসগুলো তুলে ধরবো। আপনারা নিশ্চয় জানেন যে ১৮ বছর হওয়ার পরই আপনাকে ভোটার নিবন্ধন করতে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য।

অবশ্য বর্তমানে কারো ১৬ বছর বয়স হলেই তিনি নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যাইহোক, নতুন ভোটার হতে গেলে ঠিক কি কি ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয় তা আমরা অনেকেই জানিনা। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকলে আপনি খুব সহজেই নতুন ভোটার এর জন্য আবেদন করতে পারবেন। আজকের আর্টিকেলটি আপনাদেরকে এই অজানা বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানোর জন্যই উপস্থাপন করা হচ্ছে।

নতুন ভোটার নিবন্ধন করার শর্ত কি কি?

নতুন ভোটার নিবন্ধনের জন্য আপনাকে অবশ্যই কিছু শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। এই শর্তগুলো পূরণ না হলে এটিই ধরা হয় যে আপনি ভোটার হওয়ার যোগ্য না। প্রথম শর্ত হচ্ছে আপনাকে অবশ্যই বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে, অন্যথায় আপনি ভোটার নিবন্ধন করতে পারবেন না। আপনি যে বাংলাদেশের নাগরিক তা প্রমাণ করবে আপনার জন্ম নিবন্ধন সনদ।

দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, আপনার বয়স সর্বনিম্ন ১৬ বছর হতে হবে। এর থেকে কম বয়স হলে আপনি ভোটার হতে পারবেন না। তৃতীয় এবং সর্বশেষ শর্তটি হলো, এটি আপনার প্রথমবার ভোটার নিবন্ধনের আবেদন হতে হবে। আমি আগেই বলেছি যে ইতিপূর্বে আপনি যদি অন্য কোন এলাকায় ভোটার নিবন্ধন করে থাকেন তাহলে দ্বিতীয়বারের চেষ্টাটি অবৈধ হিসেবে গণ্য হবে। সে ক্ষেত্রে আপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হতে পারে।

See also  জন্ম নিবন্ধন বাতিল করার নিয়ম

নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে?

নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে আপনার কিছু দরকারি পেপারস প্রয়োজন হবে। যে কাগজ গুলো আপনার প্রয়োজন সেগুলোর তথ্য গুলোও সঠিক থাকা জরুরী কারণ সেখানে কোন ভুল থাকলে সেই ভুল দিয়েই নিবন্ধিত হবেন আপনি নতুন ভোটার হিসেবে। যাইহোক, আপনার যা যা কাগজ লাগবে তা পর্যায়ক্রমে নিচে উল্লেখ করা হলঃ

  • জন্ম নিবন্ধন সনদ

আপনার প্রথমেই যে ডকুমেন্টটি প্রয়োজন সেটি হচ্ছে জন্ম নিবন্ধন সনদ (অবশ্যই ডিজিটাল)। জন্ম নিবন্ধন সনদের তথ্যের অনেক কিছুই ব্যবহৃত হয় NID করতে।

  • শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ

আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে SSC বা HSC certificate দরকার হবে। সার্টিফিকেটের তথ্য এবং জন্ম নিবন্ধন তথ্যের মধ্যে মিল থাকা আবশ্যক। যদি কোন গরমিল থাকে তাহলে আপনি ভোটার নিবন্ধন করতে পারবেন না। কারো কারো সার্টিফিকেট নাও থাকতে পারে।  এ ক্ষেত্রে তারা শুধুমাত্র জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া  পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স থাকলেও চলবে।

  • পিতা-মাতার NID কার্ড

আপনার নতুন NID card এর তথ্যে আপনার পিতামাতার NID নম্বর দিতে হবে। নম্বরের সাথে আপনার পিতামাতার নাম এবং অন্যান্য তথ্যগুলো জন্ম নিবন্ধন এবং শিক্ষা সনদের সাথে মিল আছে কিনা তাও দেখা গুরুত্বপূর্ণ।

  • ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষার রিপোর্ট

আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন যে জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি অংশের ব্যক্তির ব্লাড গ্রুপ লেখা থাকে। হ্যাঁ, এটির জন্য NID করার সময় আপনাকে blood group পরীক্ষার একটি রিপোর্ট জমা দিতে হয়। রিপোর্টের ছবি অনলাইনে আপলোড করার পর ভোটার নিবন্ধন আবেদনের সাথে যুক্ত করে আপনার উপজেলা নির্বাচন অফিসে জমা দিতে হবে।

  • নাগরিক সনদপত্র 

আপনাকে অবশ্যই একটি নাগরিক সনদ সংগ্রহ করতে হবে আবেদনের জন্য কারণ এটি বাধ্যতামূলক। আপনি এটি আপনার ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর অফিস থেকে নিতে পারবেন। বর্তমানে আপনার ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডের যিনি কাউন্সিলর আছেন তার দ্বারা এটি প্রত্যায়িত হতে হবে।

  • স্বামী/স্ত্রীর NID কার্ড

আপনি যদি বিবাহিত হন তাহলে আপনার স্বামী বা স্ত্রীর NID কার্ডের কপি জমা দিতে হবে। একইসাথে আপনাদের Marriage Certificate বা কাবিন নামার কপিও জমা দিতে পারেন।

  • অঙ্গীকারনামা

অঙ্গীকারনামা এমন একটি ডকুমেন্ট যেখানে লিখিত অঙ্গীকার দেয়া হয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও আপনাকে এমন কিছু করতে হবে। আপনাকে অঙ্গীকারনামায় লিখতে হবে যে আপনি ইতিপূর্বে ভোটার নিবন্ধন করেননি। যদি এটি প্রমাণিত হয় যে আপনি দ্বিতীয়বার ভোটার হয়েছেন তাহলে আপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া কেউ যদি দেরীতে ভোটার নিবন্ধন আবেদন করতে চায় তাহলেও তাকে অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হবে।

  • হোল্ডিং ট্যাক্স রশিদ

আরেকটি জরুরী ডকুমেন্ট এর কথা না বললেই নয়, সেটি হচ্ছে Holding Tax এর রসিদ। বাড়ির Holding Tax পরিশোধ করা হয়েছে এমন একটি রসিদ আপনাকে জমা দিতে হবে। রসিদে যদি আবেদনকারীর নাম না থাকে তাহলে কোন সমস্যা নেই, পরিবারের অন্য কোন সদস্যের নাম থাকলেও চলবে।

  • ইউটিলিটি বিলের কপি

নতুন ভোটার আবেদনের সাথে আপনার বর্তমান ঠিকানার মিল আছে কিনা তা প্রমাণ করতে বিদ্যুৎ, পানি অথবা গ্যাস বিলের কপি জমা দিতে হবে। এটিতেও আপনার নাম থাকা বাধ্যতামূলক না। পরিবারের যেকোনো সদস্যের নাম থাকলেও আপনি এই কপিটি ব্যবহার করতে পারবেন।

  • Passport এবং Driving License এর কপি

এই ডকুমেন্টগুলো থাকা বাধ্যতামূলক নয়। তবে যারা পড়াশুনা করেন না তাদের শিক্ষা সনদ থাকার কথা না, তারা এগুলো ব্যবহার করতে পারবেন। এগুলোও যদি না থাকে তাহলে ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন থাকাই যথেষ্ট।

See also  অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন সংশোধন (Birth Certificate Correction Online)

নতুন ভোটার হতে গেলে জন্ম নিবন্ধন থাকা জরুরী?

অবশ্যই ! এটি ছাড়া আপনার ভোটার নিবন্ধনের আবেদন করা যাবেনা। জাতীয় পরিচয়পত্রে যে তথ্য গুলো ব্যবহার করা হয় সেটি সাধারণত জন্ম নিবন্ধ সনদ থেকেই নেয়া হয়। এজন্য এই সনদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভোটার আবেদন সফলভাবে সম্পন্ন হলেই কি ভোট দেয়া যাবে?

না, আপনার নাম ততক্ষণ ভোটার তালিকায় উঠবে না যতক্ষণ না আপনার বয়স ১৮ বছর হচ্ছে। ১৬ বছর বয়সে আপনি ভোটার আবেদন করতে পারবেন, তবে ভোট দিতে হলে অবশ্যই আপনার বয়স ১৮ বছর হতে হবে।

শেষ কথা

আজকের পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে যে নতুন ভোটার নিবন্ধন করতে কি কি লাগে এবং এর শর্ত গুলো কি কি। আশা করা যায় এগুলো আপনার ভোটার আবেদনের জন্য যথেষ্ট সহায়ক হবে। আমরা এখানে সব দরকারি তথ্য গুলোই রাখার চেষ্টা করেছি। তারপরও যদি আপনার আরও কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট করতে ভুলবেন না।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *