কসোভো কাজের ভিসা

বাংলাদেশীরা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কাজের জন্য যেয়ে থাকেন, বিশেষ করে রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়ার মত দেশ গুলো আমাদের দেশ থেকে আগে প্রচুর লোক যেতেন। তইবে বর্তমানে এসব দেশে যাওয়া অতটা সহজ নয় অথবা বলতে পারেন প্রায় বন্ধই। এজন্য অনেকেই কসোভোতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে এখানে যাওয়ার পূর্বে বেশীরভাগ লোকেরই কিছু কমন প্রশ্ন থাকে। যেমন – (Kosovo Work Visa) কসোভো কাজের ভিসা, বেতন কত এবং কোন কাজের চাহিদা বেশি ইত্যাদি।

কসোভোও একটি ইউরোপিয়ান মুসলিম দেশ। লোকদের এই দেশে যেতে চাওয়ার বেশ কিছু কারণও রয়েছে এবং তার মধ্যে একটি হচ্ছে কসোভো ওয়ার্ক পারমিট ভিসা খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। যাইহোক, আপনাদের সমস্ত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি। আশা করা যায়, পুরো আর্টিকেলটিতে আপনারা আমাদের সাথে থাকবেন।

কসোভো কাজের ভিসা (Kosovo Work Visa)

কসোভোতে বৈধভাবে কাজ করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ভিসা এবং কাজের অনুমতি নিতে হবে। এজন্য আপনি যদি কসোভো যাওয়ার চিন্তাভাবনা করে থাকেন তাহলে আগেই এ বিষয়ে আগে থেকেই পূর্ণ ধারণা নিতে হবে। এক্ষেত্রে কসোভো এম্বাসির মাধ্যমে যদি আপনারা আবেদন করেন তাহলে সেটি সবথেকে ভালো কারণ এই উপায়টি অত্যন্ত নিরাপদ এবং বিশ্বস্ত। যেহেতু বাংলাদেশে কসোভোর একটি এম্বাসি রয়েছে সেহেতু আপনি সেখানে গিয়ে খুব সহজেই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এম্বাসির মাধ্যমে আবেদন করার সুবিধা হচ্ছে আপনি দ্রুততম সময়ের মধ্যে অর্থাৎ ২ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই ভিসা পেয়ে যাবেন।

তবে এম্বাসি ছাড়াও আপনি কিছু সরকারি এজেন্সির মাধ্যমেও আবেদন করতে পারবেন। এসব এজেন্সি গুলোর মাধ্যমে ভিসা পেতে একটু বেশী খরচ হলেও এখানেও দ্রুত ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভিসা আবেদনের আরও একটি ভালো উপায় রয়েছে সেটি হচ্ছে অনলাইনে আবেদন করা। এই উপায়ে আপনি নিজেই কাজটি করতে পারবেন। আপনাকে কসোভোর অফিসিয়াল ইমিগ্রেশন পোর্টালে যেতে হবে এবং সেখানে একটি আবেদন ফরম পাবেন, সেটি পূরণ করে সাবমিট করে দিলেই হয়ে যাবে। তবে আবেদন করার পূর্বে আপনাকে অন্যান্য দরকারি ডকুমেন্টস গুলোর স্ক্যান কপি রাখতে হবে এবং সেগুলোও সাবমিট করতে হবে। নিজে আবেদন করার প্রক্রিয়াটি কিছুটা ঝামেলাপূর্ণ মনে হলেও আপনার বাড়তি খরচ কিছুটা হলেও কমবে।

কসোভো কাজের ভিসা করতে কি কি লাগে

  • ই-পাসপোর্ট
  • পুলিশ ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট
  • লাইসেন্সকৃত নিয়োগকর্তা কর্তৃক কাজের অফার
  • মেডিকেল সনদ
  • পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি
  • কাজের অভিজ্ঞতার প্রমাণ
  • কাজের দক্ষতার সার্টিফিকেট

কসোভো কাজের ভিসার খরচ কত? (Kosovo Work Visa Cost?)

আপনি ইতিমধ্যে যদি কসোভোতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন তাহলে সেখানে যাওয়ার যাবতীয় খরচ সম্পর্কে আপনাকে অবশ্যই ধারণা নিতে হবে। বিশেষ করে বাংলাদেশ থেকে কসোভোতে যাওয়ার ভিসা করতে আপনাকে বেশ বড় পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। কসোভো ভিসার আবেদন করতে হলে আপনাকে প্রাথমিকভাবে ৬০ ইউরো বা প্রায় ৭,২০০ টাকা খরচ করতে হবে, এটি হচ্ছে আবেদন ফী। পরবর্তীতে আরও আনুষঙ্গিক কিছু খরচ রয়েছে।

আগেই উল্লেখ করেছি যে এম্বাসির মাধ্যমে ভিসা পাওয়া অনেক দ্রুত হয় এবং এজন্য আপনাকে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকার মতো খরচ করতে হবে। এই খরচের মধ্যেই রয়েছে বিমান ভাড়া সহ অন্যান্য যাবতীয় খরচাবলী। তবে সব ক্ষেত্রেই যে খরচ একরকম হবে তা নয়। সরকারি কর্মসংস্থান সংস্থাগুলোর মাধ্যমেও আপনি ভিসার আবেদন করতে পারেন, তবে এখানে খরচ তুলনামূলকভাবে কম অর্থাৎ ৩ থেকে ৪ লাখ। আপনাকে মনে রাখতে হবে যে এই প্রক্রিয়াটি কিছুটা সময়সাপেক্ষ।

সর্বশেষ আপনি এজেন্সির মাধ্যমে ভিসা পেতে পারেন। আমাদের দেশে বিভিন্ন বেসরকারি এজেন্সি রয়েছে যারা বিদেশে কাজের ভিসার বিভিন্ন প্যাকেজ অফার করে থাকে। এজেন্সির মাধ্যমে কসোভো যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে গড়ে ৯ থেকে ১০ লক্ষ টাকার মত খরচ করতে হবে পারে। তবে, এজেন্সির মাধ্যমে যাওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে কারণ সবাই ভালো হয় না।

কসোভোতে কোন কাজের চাহিদা সবথেকে বেশী?

কসোভোতে কোন কাজের চাহিদা সবথেকে বেশী এটি জানা থাকলে বোধ হয় আপনার সেখানে যাওয়া এবং কাজ পাওয়াটা সুবিধাজনক হবে। জেনে রাখা ভালো যে কসোভোর অর্থনৈতিক দিক অনেকটাই উন্নত এবং এদেশে প্রযুক্তিগত কাজগুলোর বেশ চাহিদা রয়েছে অর্থাৎ তাদের প্রায় সমস্ত কাজই প্রযুক্তি নির্ভর। এছাড়া আরও বেশ কিছু অন্যান্য কাজেরও চাহিদা রয়েছে যেগুলোর জন্য তারা প্রতি বছরই আমাদের দেশ সহ অন্যান্য দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে থাকে। নিচে আমরা পর্যায়ক্রমে ঐ দেশের কাজের সুযোগ সম্পর্কে আলোচনা করছিঃ

প্রথমত, কনস্ট্রাকশনের কাজের বেশ চাহিদা রয়েছে। আপনার যদি এই কাজে কিছু অভিজ্ঞতা থাকে এবং আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে এই কাজটির প্রচুর সুযোগ রয়েছে ওখানে।

দ্বিতীয়ত, হোটেল বা রেস্টুরেন্ট এর কাজ। আপনি জানলে অবাক হবেন যে কসোভোতে অন্যান্য কাজের তুলনায় এই কাজের চাহিদা একটু বেশীই। তাই এই কাজের জন্যও আপনি যেতে পারেন।

কারখানায় উৎপাদন কাজের জন্যও কসোভো শ্রমিক নিয়োগ করে থাকে। ওখানে বিভিন্ন কারখানা রয়েছে যেখানে প্রচুর বাংলাদেশী কর্মী ইতিমধ্যেই কর্মরত রয়েছে।

আমাদের দেশের মত কসোভোতেও অনেক পোশাক কারখানা রয়েছে। তবে বাংলাদেশের তুলনায় কসোভোর পোশাক কারখানায় কাজ করা শ্রমিকরা অনেক বেশী সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন। এজন্যই তারা এই কাজের জন্য কসোভোতে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে থাকেন।

আপনি যদি প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য এদেশে যাওয়া একটি ভালো সিদ্ধান্ত হতে পারে কারণ এখানে ফ্যাক্টরির কাজের জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে থাকে। এইসব ফ্যাক্টরি সাধারণত দক্ষ লোক খুঁজে থাকে। কাজেই, আপনি যদি নিজেকে দক্ষ মনে করেন তাহলে এই সুযোগটি অবশ্যই আপনার জন্য।

কসোভো কাজের বেতন কত?

কসোভোতে যাওয়ার পূর্বে আরও একটি বিষয় আপনার জেনে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে এখানকার কাজের বেতন কেমন। যেহেতু কসোভোর সরকারি মুদ্রা হচ্ছে ইউরো সেহেতু এখানকার বেতন আপনি ইউরো হিসেবেই পাবেন। সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী কসোভোতে একজন শ্রমিকের মাসিক বেতন ২৬৪ ইউরো যা বাংলাদেশি টাকায় ৩১,৩৬৮/- ।

Average Salary in Kosovo

তবে আপনি এখানে দক্ষতা দেখাতে পারলে মাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজারও ইনকাম করতে পারবেন। তবে কাজের ক্ষেত্রে এখানে ছোট একটা সমস্যা রয়েছে সেটা হচ্ছে আপনার মাসিক বেতনে উপর ১০% করে ফী কেটে নেয়া হয়। কাজেই, আপনি যে মূল বেতনটি পান আপনাকে তার থেকে কম প্রদান করবে তারা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, যদি আপনি মাসে ৪০ হাজার টাকা ইনকাম করেন তাহলে ১০% অর্থাৎ ৪ হাজার টাকা কেটে নেয়া হবে।

শেষ কথা

আশা করা যায়, উপরের আলোচনা থেকে আপনারা কসোভো কাজের ভিসা, বেতন কত এবং কোন কাজের চাহিদা বেশি ইত্যাদি সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা পেয়েছেন। কসোভোতে অনেক বেশী কাজের সুযোগ এবং যাওয়ার সুবিধার কারণে বাংলাদেশ থেকে অনেক শ্রমিকই সেখানে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন।

তাই, আপনিও যদি এখানে যেতে চান তাহলে আলোচিত প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আরও ভালো ভাবে ধারণা নিন। কসোভো কাজের ভিসা সম্পর্কে যদি আপনাদের আর কোন প্রশ্ন থাকে জানাতে দ্বিধা করবেন না। লেখাটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ এবং সর্বোপরি যারা যেতে চান তাদের জন্য শুভকামনা রইলো।

Similar Posts

2 Comments

  1. আমি একজন বাংলাদেশী নাগরিক আমার একটি বৈধ পাসপোর্ট আছে আমি একটি কোম্পানির জব ভিসা চাই আপনাদের সহযোগিতায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *