২০ তম গ্রেডে পেনশন কত

বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চারটি শ্রেণিতে মাসিক বেতন দেওয়া হয়। বর্তমানে ১ থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত বেতন স্কেল চালু আছে। ২০তম গ্রেড মূলত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত, যা সর্বনিম্ন বেতন স্তরকে বোঝায়।

চতুর্থ শ্রেণির ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের বেতন স্কেল হলো ৮,২৫০ টাকা থেকে ২০,০১০ টাকা পর্যন্ত। তাদের মূল বেতন ৮,২৫০ টাকা থেকে শুরু হলেও, প্রতি মাসে তারা গড়ে ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা বেতন পান। ২০,০১০ টাকা হলো এই গ্রেডের সর্বোচ্চ বেতন, যা পাওয়ার পর আর বেতন বৃদ্ধি হয় না।

বর্তমান সময়ে অনেকেই সরকারি চাকরির প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন। কিন্তু চাকরি পাওয়ার আগে সবাই বেতন ও ভাতা সম্পর্কে জানতে চান। আজকের আর্টিকেলে আমরা আপনাদেরকে ২০তম গ্রেডের মোট বেতন, বিভিন্ন গ্রেডের বেতন স্কেল, ভাতা, পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেব।

২০ তম গ্রেডে বেতন কত

২০ তম গ্রেড মূলত পিয়ন, অফিস সহায়ক বা সমমানের পদে প্রযোজ্য। এই গ্রেডের বেতন স্কেল ৮,২৫০ টাকা থেকে শুরু হয়ে ২০,০১০ টাকায় শেষ হয়। শুরুর দিকে একজন ২০ তম গ্রেডের কর্মচারীর হাতে পাওয়া মাসিক বেতন সাধারণত ১২,৫০০/- থেকে ১৪,৫০০/- টাকার আশেপাশে থাকে।

২০১৫ সালে পাস হওয়া বেতন স্কেলের সর্বশেষ গ্রেড অর্থাৎ ২০ তম গ্রেডে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের সর্বশেষ স্তরের কর্মচারীদের বেতন প্রদান করা হয়। এই গ্রেডের বেতন কম হলেও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা এবং চাকরির নিশ্চয়তার কারণে এই গ্রেডের চাকরি অনেকের কাছেই বেশ আকর্ষণীয়।

২০ গ্রেডের বেতন স্কেল ২০২৫

চাকরির বয়স বাড়ার সাথে সাথে সরকারি কর্মকর্তাদের বেতনও একটি নির্দিষ্ট নিয়মে বাড়তে থাকে। সাধারণত, প্রতি বছর আপনার মূল বেতন ৫% হারে বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধি পাওয়া বেতনটা আপনার নতুন মূল বেতন হিসেবে ধরা হয়। এরপর, পরের বছর এই নতুন মূল বেতনের ওপর আবারও ৫% হারে বেতন বৃদ্ধি পায়। এভাবেই প্রতি বছর বেতনের ওপর বৃদ্ধি পেতে পেতে তা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকে।

See also  অনলাইনে জমির মালিকানা বের করার উপায় ২০২৫

জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ অনুযায়ী ২০ তম গ্রেডের বেতন কাঠামোটি নিম্নরূপ:

ক্রমিক বেতনের ধাপ (টাকায়) বার্ষিক বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট)
শুরুর ধাপ ৮,২৫০/−
২য় ৮,৬৭০/− ৪২০/−
৩য় ৯,১১০/− ৪৪০/−
৪র্থ ৯,৫৭০/− ৪৬০/−
৫ম ১০,০৫০/− ৪৮০/−
৬ষ্ঠ ১০,৫৬০/− ৫১০/−
৭ম ১১,০৯০/− ৫৩০/−
৮ম ১১,৬৫০/− ৫৬০/−
৯ম ১২,২৪০/− ৫৯০/−
১০ম ১২,৮৬০/− ৬২০/−
১১তম ১৩,৫১০/− ৬৫০/−
১২তম ১৪,১৯০/− ৬৮০/−
১৩তম ১৪,৯০০/− ৭১০/−
১৪তম ১৫,৬৫০/− ৭৫০/−
১৫তম ১৬,৪৪০/− ৭৯০/−
১৬তম ১৭,২৭০/− ৮৩০/−
১৭তম ১৮,১৪০/− ৮৭০/−
১৮তম ১৯,০৫০/− ৯১০/−
সর্বোচ্চ ধাপ ২০,০১০/− ৯৬০/−

মূলত, আপনার বেতন এক বছর যে পরিমাণ বাড়ে, পরের বছর কিন্তু সেটার ওপর ভিত্তি করে আরও বেশি বাড়ে। এই ধারাবাহিক বেতন বৃদ্ধিকে তাই চক্রবৃদ্ধি বেতন বৃদ্ধি বলা হয়।

দেখে নিনঃ এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বেতন কত ২০২৫

২০ তম গ্রেডের ভাতা কত টাকা

সাধারণত, সরকারি চাকরিতে বেতন গ্রেড অনুযায়ী বিভিন্ন ভাতার পরিমাণে পার্থক্য দেখা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও আছে। যেমন, ২০তম গ্রেডের অর্থাৎ চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মতোই প্রায় সমান অঙ্কের বিভিন্ন ভাতা পেয়ে থাকেন।

তবে, বাড়ি ভাড়া ভাতার ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ঢাকা শহরে কর্মরত একজন ২০তম গ্রেডের কর্মচারী তার মূল বেতনের ৬৫% হারে মাসিক ৫,৬০০ টাকা বাড়ি ভাড়া ভাতা পান। অন্যান্য গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য এই হার ভিন্ন হতে পারে।

ঢাকা শহরের বাইরে কর্মরত ২০ তম গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য বাড়ি ভাড়া ভাতার নিয়ম কিছুটা ভিন্ন। পৌর এলাকায় কর্মরত একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তাঁর মূল বেতনের ৫৫% হারে মাসিক ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া ভাতা পান।

অন্যদিকে, উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত একজন ২০ তম গ্রেডের কর্মচারী তাঁর মূল বেতনের ৫০% হারে মাসিক ৪,৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া ভাতা পেয়ে থাকেন। আবার বাড়ি ভাড়া ভাতার পাশাপাশি, যাদের দুইটি সন্তান আছে, তারা অন্যদের চেয়ে মাসিক ১,০০০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাতা পান। এই অতিরিক্ত ভাতা তাদের আর্থিক সহায়তাকে আরও কিছুটা বাড়িয়ে তোলে।

২০ তম গ্রেডের বোনাস কত টাকা

অন্যান্য গ্রেডের কর্মকর্তাদের মতোই, ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরাও বিভিন্ন ধরনের বাৎসরিক বোনাস এবং উৎসব ভাতা পেয়ে থাকেন।

২০তম গ্রেডের একজন কর্মচারী মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদের সময় তার মূল বেতনের সমপরিমাণ টাকা বোনাস হিসেবে পান। এর পাশাপাশি, বৈশাখী বোনাস হিসেবে তারা মূল বেতনের ২০% হারে অতিরিক্ত টাকা পেয়ে থাকেন। এই ভাতাগুলো উৎসবের সময় তাদের আর্থিক সহায়তা যোগায়।

See also  আব্দুল্লাহ নামের অর্থ কি? (ইসলামিক, আরবি বাংলা) Abdullah name meaning

২০ তম গ্রেডের রাজধানীতে সর্বসাকুল্যে বেতন কত

বাংলাদেশের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর হলো রাজধানী ঢাকা। চাকরির উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ঢাকায় আসেন। ঢাকায় ২০তম গ্রেডে কর্মরত একজন কর্মচারী তার মূল বেতনের সাথে মোট ৮,৭০০ টাকা বোনাস হিসেবে পান। সব মিলিয়ে, একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ঢাকা শহরে সর্বসাকুল্য ১৬,৯৫০ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন।

২০ তম গ্রেডে জেলা বা উপজেলা পর্যায়ে সর্বসাকুল্যে বেতন কত

বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সর্বনিম্ন স্তরের কর্মকর্তারা তাদের মূল বেতনের পাশাপাশি নানা ধরনের ভাতা পেয়ে থাকেন।

উপজেলা পর্যায়ে ২০তম গ্রেডে কর্মরত একজন কর্মচারী তার মূল বেতনের প্রায় সমান পরিমাণ টাকা ভাতা হিসেবে পান। মোটকথা, একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী উপজেলায় সর্বসাকুল্যে ১৫,৮৫০ টাকা বেতন পেয়ে থাকেন।

২০ তম গ্রেডে পেনশন কত

সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে, একজন কর্মচারীর দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা এবং কর্মজীবনের শেষ পর্যায়ের আর্থিক সুবিধাগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ। নিচে চতুর্থ শ্রেণির একজন কর্মচারীর ৩০ বছরের চাকরি জীবনের কিছু আর্থিক বিষয় তুলে ধরা হলো:

মূল বেতন ও সর্বসাকুল্য বেতন: একজন ২০তম গ্রেডের কর্মচারী যদি একটানা ৩০ বছর চাকরি করেন, তবে তার মূল বেতন বেড়ে দাঁড়াবে ২০,০১০ টাকা। এছাড়া, তার মূল বেতন ও সব ধরনের ভাতা যোগ করে সর্বমোট বেতন হবে ৩৫,৬৫৬ টাকা।

এককালীন আর্থিক সুবিধা হচ্ছে চাকরি জীবনের একেবারে শেষ সময়ে, ১৮ মাসের ঐচ্ছিক ছুটি বিক্রি করার সুযোগ থাকে। এই ছুটি বিক্রির পর ওই কর্মচারী ন্যূনতম ৪০ লাখ থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত এককালীন আর্থিক সুবিধা পেতে পারেন। এটি দীর্ঘ কর্মজীবনের পর একটি উল্লেখযোগ্য আর্থিক প্রাপ্তি।

এছাড়া একজন কর্মচারী অবসরের পরেও বেশ কিছু আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকেন। নিচে ২০তম গ্রেডের একজন কর্মচারীর অবসর-পরবর্তী কিছু প্রাপ্তি তুলে ধরা হলো:

চিকিৎসা ভাতা: ২০তম গ্রেডের একজন কর্মচারী অবসরের পর প্রতি মাসে ১,৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা পান। তবে, যদি তার বয়স ৬৫ বছরের বেশি হয়, তবে এই ভাতা বেড়ে ২,৫০০ টাকা হবে। এই সুবিধাটি তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সহায়তা করে।

মাসিক অবসরকালীন বেতন: অবসরের পর, একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী তার শেষ মূল বেতনের ৫০% হারে মাসিক পেনশন পাবেন, যা সর্বনিম্ন ১০,০০৫ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এই মাসিক বেতন তাদের অবসর জীবনকে আর্থিক দিক থেকে সুরক্ষিত রাখে।

See also  অনলাইনে বিদ্যুৎ বিলের কপি ২০২৫ ডাউনলোড করুন

বর্তমানে শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদণ্ড আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। আগে যেখানে কম শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েও ২০তম গ্রেডের চাকরি পাওয়া সহজ ছিল, এখন চাকরির বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে উচ্চশিক্ষিতরাও এসব পদের জন্য আবেদন করছেন। ফলে কম শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের জন্য চাকরি পাওয়াটা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই কঠিন পরিস্থিতির সুযোগে, কিছু মানুষ দ্রুত চাকরি পাওয়ার আশায় ঘুষের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এতে একদিকে যেমন যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছেন, অন্যদিকে সমাজে দুর্নীতিও বাড়ছে।

সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর (FAQs)

প্রশ্ন ১: ২০ তম গ্রেডের মূল বেতন কত?

উত্তর: জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ অনুযায়ী ২০ তম গ্রেডের মূল বেতন শুরু হয় ৮,২৫০ টাকা থেকে। এই গ্রেডের স্কেল হলো ৮,২৫০ টাকা থেকে ২০,০১০ টাকা পর্যন্ত।

প্রশ্ন ২: একজন নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ২০ গ্রেডের কর্মচারী মোট কত টাকা বেতন পান?

উত্তর: একজন নতুন কর্মচারী কর্মস্থলের স্থানভেদে আনুমানিক ১২,৫০০ থেকে ১৪,৫০০ টাকা মোট বেতন হিসেবে হাতে পান।

প্রশ্ন ৩: ২০ তম গ্রেডের কর্মচারীরা কী কী ভাতা পেয়ে থাকেন?

উত্তর: সাধারণত বাড়ি ভাড়া ভাতা স্থানভেদে ৩০% থেকে ৫০%, চিকিৎসা ভাতা ১,৫০০/− টাকা, এবং পদভেদে সামান্য যাতায়াত বা টিফিন ভাতা পেয়ে থাকেন।

প্রশ্ন ৪: ২০ তম গ্রেডে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি কত হয়?

উত্তর: ২০ তম গ্রেডের কর্মচারীরা প্রতি বছর তাদের বেসিকের পরবর্তী ধাপে সাধারণত ৫% হারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পান।

প্রশ্ন ৫: ২০ তম গ্রেডের কর্মচারীদের বাড়ি ভাড়া ভাতার হার কত?

উত্তর: বাড়ি ভাড়া ভাতা কর্মস্থলের ওপর নির্ভর করে:

  • ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে: মূল বেতনের ৫০%।
  • অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনে: মূল বেতনের ৪০%।
  • উপজেলা ও অন্যান্য স্থানে: মূল বেতনের ৩০%।

প্রশ্ন ৬: ২০ তম গ্রেডে কর্মরত অবস্থায় কি লোন নেওয়া যায়?

উত্তর: হ্যাঁ, সকল সরকারি কর্মচারীর মতো ২০ তম গ্রেডের কর্মচারীরাও জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড-এ টাকা জমা রাখেন এবং প্রয়োজন হলে সেই ফান্ড থেকে সুদমুক্ত ঋণ নিতে পারেন।

লেখকের শেষ মতামত

আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাকে ২০ তম গ্রেডের মোট বেতন, ভাতা, পেনশন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে পেরেছে। ২০ তম গ্রেড হলো সরকারি প্রশাসনের ভিত্তি স্তর, যা ফাইল পরিবহন থেকে শুরু করে অফিসের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখা পর্যন্ত সকল মৌলিক কাজ নিশ্চিত করে।

যদিও এই গ্রেডের বেতন স্কেলটি সর্বনিম্ন, তবে সরকারি চাকরি হওয়ার কারণে এটি বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট, পেনশন, উৎসব ভাতা, ও নববর্ষ ভাতার মতো সুবিধাসমূহ নিশ্চিত করে, যা অন্যান্য বেসরকারি নিম্নপদের কর্মীদের জন্য সাধারণত সহজলভ্য নয়। তাই অর্থনৈতিকভাবে এটি একটি নিরাপদ ও স্থিতিশীল বেতনের উৎস।

Similar Posts

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *