ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে চান? প্রয়োজন নেই অন্য কারোর সাহায্য কারণ আপনি এটি খুব সহজেই ঘরে বসে করতে পারবেন। আপনাকে শুধু সঠিক উপায়টি জেনে নিতে হবে। অনেকেই মনে করেন যে দালাল বা অন্য কারোর সাহায্য ছাড়া সম্ভবত পাসপোর্ট করা যায় না, এই ধারনাটি ভুল প্রমাণ করেছে ই পাসপোর্ট। আপনি আপনার স্মার্টফোন না কম্পিউটার দিয়েই যেকোনো সময় আবেদন করতে পারেন। আজকের আর্টিকেল এ আপনি অনলাইনে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানবেন। আশা করি পুরো লেখাটিতে আমাদের সাথেই থাকবেন।
ই পাসপোর্ট সম্পর্কে
বিশ্বের অনেক দেশেই ইতিমধ্যে ইলেকট্রনিক বা ই–পাসপোর্ট চালু হয়েছে এবং ১১৯ তম দেশ হিসেবে মাত্র কয়েক বছর আগেই এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশও। বাংলাদেশ সরকার নাগরিকদের সুবিধা বিবেচনা করে এবং ঝক্কি ঝামেলা এড়াতে এই ই–পাসপোর্ট সিস্টেম চালু করেছে। পূর্বে পাসপোর্টের আবেদন করার জন্য সশরীরে যেতে হত যেটা বেশ ঝামেলাপূর্ণ।
এখন আপনি একটি ফোন বা কম্পিউটার এবং একটি ইন্টারনেট সংযোগের সাথে নিজেই করে ফেলতে পারেন এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি। তবে যেহেতু নিজে করবেন সেহেতু এটির ব্যাপারে সমস্ত তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জেনে নেয়া দরকার কারণ আবেদনে ভুল হলে তা সংশোধন করার কোন উপায় নেই।
ই পাসপোর্ট করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্রঃ
ই পাসপোর্ট এর আবেদন করার জন্য অবশ্যই আপনাকে কিছু পেপারস আগে থেকেই প্রস্তুত রাখতে হবে কারণ এসব ডকুমেন্ট এর তথ্য গুলোই আপনাকে ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া আবেদনের পর যখন ফিঙ্গারপ্রিন্ট দেয়ার জন্য আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে যাবেন তখনও সাথে করে এইসব ডকুমেন্টস নিয়ে যেতে হবে। নিচে একনজরে দেখে নিন যে আপনার কোন ডকুমেন্ট প্রয়োজন হবেঃ
যা যা লাগবে |
জাতীয় পরিচয় পত্র |
অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ (প্রার্থী যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়) |
পিতা-মাতার আইডি কার্ডের কপি (প্রার্থী যদি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়) |
ই পাসপোর্ট আবেদন কপি |
পাসপোর্ট অ্যাপ্লিকেশন সামারি |
নাগরিক সনদ / চেয়ারম্যান সার্টিফিকেট |
পেশাজীবী প্রমাণপত্র |
ইউটিলিটি বিলের কপি (বিদ্যুৎ / গ্যাস) |
অনলাইনে ই পাসপোর্ট করার নিয়মঃ ধাপে ধাপে জেনে নিন
আপনাদেরকে আর অপেক্ষায় রাখতে চাইছিনা কারণ আমি জানি যে আপনারা ই পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে অত্যন্ত আগ্রহী। এখন আমি আপনাদেরকে পুরো প্রক্রিয়াটি ধাপে ধাপে জানাবো।
ধাপ ১ঃ ই পাসপোর্ট করার জন্য আপনাকে www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করতে হবে। লিঙ্কে প্রবেশ মাত্রই আপনি এটি পেজে প্রবেশ করবেন।
ধাপ ২ঃ এই পেজের উপরের দিকে থাকা মেন্যুগুলো থেকে ‘Apply Online’ অপশনে ক্লিক করুন। এতিতে ক্লিক করার ফলে আপনি একটি নতুন পেজে প্রবেশ করবেন।
ধাপ ৩ঃ এই পেজে আপনি কয়েকটি অপশন পাবেন। যেহেতু আপনি বাংলাদেশ থেকে আবেদন করবেন সেহেতু ‘Yes’ অপশনটি আগে থেকেই সিলেক্ট করা থাকবে। এরপর আপনাকে নিচের অপশন থেকে আপনার জেলা বাছাই করুন। এরপর থানা সিলেক্ট করুন। সবশেষে ‘Continue’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪ঃ এখন আপনাকে আপনার ইমেইলটি দিতে হবে অবশ্যই যেটা সচল আছে। ইমেইল এড্রেস দেয়ার পর ‘I am human’ এর ফাঁকা ঘরে ক্লিক করুন, এরপর ‘Continue’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৫ঃ এখন আপনি যে পেজে আছেন যেখানে আপনাকে আপনার মোবাইল নম্বর দিতে হবে। মোবাইল নম্বর দেয়ার পর আবারও ‘I am human’ এ ক্লিক করুন। এরপর ‘Create Account’ বাটনে ক্লিক করুন নিচে দেখানো ছবির মতঃ
ধাপ ৬ঃ বর্তমানে আপনি যে পেজে আছেন সেটিতে খুব মনোযোগ দিন কারণ এখানে আপনাকে অনেক গুলো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বসাতে হবে। একটু আগে আপনি ইমেইল এড্রেসটি ব্যবহার করেছেন সেটি এখানেও থাকবে। এরপর একটি password দিন যেমনটা নির্দেশনা দেয়া আছে।
ধাপ ৭ঃ এবার নিচে লক্ষ্য করুন ‘Personal Information’ section এ। আপনার NID তে যে নাম যেভাবে লেখা আছে ঠিক সেভাবেই নিচের বক্স গুলোতে বসাতে হবে। Mobile number অংশে আপনার আগের দেয়া নম্বরটি শো করবে। এরপর human verification করে ‘Create Account’ option এ ক্লিক করুন।
ধাপ ৮ঃ আপনার দেয়া ইমেইল এড্রেসে একটি মেইল যাবে, মেইলটি খুলুন এবং activation link এ ক্লিক করুন। যদি আপনি কোন মেইল না পান তাহলে ‘Resend’ অপশনে ক্লিক করুন।
ধাপ ৯ঃ এ পর্যায়ে ইমেইল ভেরিফিকেশনের পর যে পেজটি আপনার সামনে আসবে সেখান থেকে একটি অপশন বেছে নিতে হবে। আপনি যদি সাধারণ নাগরিক হিসেবে পাসপোর্ট করতে চান তাহলে Ordinary Passport অপশন বাছাই করুন। তবে আপনি যদি সরকারি কর্মকর্তা হন তাহলে আপনাকে Official Passport অপশনটি বেছে নিতে হবে।
ধাপ ১০ঃ তথ্যটি সেভ করার পর আপনাকে কিছু ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করে আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফরমটির নির্ধারিত স্থানে নাম, লিঙ্গ, পেশা, জন্ম তারিখ বসাতে হবে এবং জাতীয়তা নির্বাচন করতে হবে। সব তথ্য পূরণ করা হয়ে গেলে ‘Save & Continue’ বাটনে ক্লিক করুন।
ধাপ ১১ঃ ঠিকানা নির্বাচন ই পাসপোর্ট আবেদনের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এখানে আপনি যেই ঠিকানা ব্যবহার করবেন, সেই ঠিকানায়ই মূলত পুলিশ ভেরিফিকেশন হবে। তাই পুলিশ ক্লিয়ারেন্সে যাতে কোন ঝামেলা না হয় সেজন্য সঠিক ঠিকানা প্রদান করা জরুরী।
ধাপ ১২ঃ এখন আপনি ৪ টি অপশন পাবেন এখানে থেকে ‘No, I don’t have any previous passport’ সিলেক্ট করুন যেহেতু আপনি নতুন পাসপোর্ট করতে চান। তবে আপনার যদি এর আগেও কোন ই পাসপোর্ট থেকে থাকে তাহলে সে অনুযায়ী অপশন বেছে নিন।
ধাপ ১৩ঃ Parental information অংশে আপনার পিতামাতার তথ্য প্রদান করুন যেমন পিতামাতার নাম, পেশা, NID নম্বর, জাতীয়তা ইত্যাদি। এরপর বৈবাহিক অবস্থা সিলেক্ট আপনার বর্তমান অবস্থা অনুযায়ী।
ধাপ ১৪ঃ ইমারজেন্সি কন্টাক্ট সেকশনে আপনি ব্যতীত পরিবারের অন্য কারোর ফোন নম্বর দিতে হবে যার সাথে জরুরী ভিত্তিতে যোগাযোগ করা যাবে।
ধাপ ১৫ঃ এই ধাপে আপনাকে পাসপোর্টের ধরন বাছাই করতে হবে। আপনি কোন মেয়াদে কত পৃষ্ঠার পাসপোর্ট নিতে চান তা নির্বাচন করুন।
ধাপ ১৬ঃ আপনি কোন মাধ্যমে পাসপোর্ট ডেলিভারি পেতে চান সেটা নির্বাচন করুন। অনলাইনে আপনি রেগুলার এবং এক্সপ্রেস এই দুইটি অপশন পাবেন। যেটিতে আপনি পেতে চান সেটিই সিলেক্ট করুন।
ধাপ ১৭ঃ এখন আপনাকে Passport Fee করতে হবে। তবে আবেদন চূড়ান্ত ভাবে সাবমিট করার পূর্বে সমস্ত তথ্যগুলো ভালোভাবে যাচাই করে নিন। যাইহোক, নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংকের মাধ্যমে পেমেন্ট করা ভালো।
ধাপ ১৮ঃ ব্যাংক চালানের মাধ্যমে পেমেন্ট পরিশোধ করার মাধ্যমে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন আপনার আবেদনের কপি এবং Application summery প্রিন্ট করুন অথবা pdf আকারে ডাউনলোড করে সংরক্ষন করে রাখুন। পরবর্তীতে এটি কাজে লাগবে।
ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে?
এই প্রশ্নটি অনেকেই করে থাকেন। ই পাসপোর্ট করতে আপনাকে ৪০২৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৩,৮০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হতে পারে। এছাড়া আপনি যদি কোন কম্পিউটার সেবার দোকান থেকে আবেদন করেন তখন আবেদন ফী হিসেবে ২০০ থেকে ৩০০ টাকাও দিতে হবে। ই পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগবে তা মূলত নির্ভর করে পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠা সংখ্যা, মেয়াদ ও ডেলিভারীর ধরণ এর উপর।
e-Passport fees for inside Bangladesh (Including 15% VAT)
- Regular delivery: TK 4,025
- Express delivery: TK 6,325
- Super Express delivery: TK 8,625
- Regular delivery: TK 5,750
- Express delivery: TK 8,050
- Super Express delivery: TK 10,350
- Regular delivery: TK 6,325
- Express delivery: TK 8,625
- Super Express delivery: TK 12,075
- Regular delivery: TK 8,050
- Express delivery: TK 10,350
- Super Express delivery: TK 13,800
ই পাসপোর্ট অনলাইন আবেদন বাতিল করবেন কিভাবে?
আসলে অনলাইনে যেমন পাসপোর্ট আবেদন করার নিয়ম আছে তেমনভাবে এটি বাতিল করার কোন পদ্ধতি নেই। কাজেই যদি আপনি এটি একান্তই বাতিল করতে চান তাহলে অন্য উপায়ে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার আঞ্চলিক জেলা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালকের কাছে একটি লিখিত আবেদন করতে হবে।
কিভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ই পাসপোর্ট কিভাবে পাবেন?
আপনি পাসপোর্ট কত দ্রুত পাবেন তা নির্ভর করে আপনি কোন ডেলিভারি মাধ্যম নির্বাচন করছেন তার উপর। কম সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট পেতে চাইলে আপনাকে এক্সপ্রেস ডেলিভারি অথবা সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারি নির্বাচন করতে হবে।
কেন ই-পাসপোর্ট করবেন?
ই-পাসপোর্টের ব্যবহারের এমন সব চমৎকার সুবিধা রয়েছে যা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। একজন ই-পাসপোর্টধারী অন্য দেশে যাতায়াতের জন্য সাধারণ পাসপোর্ট ধারীদের তুলনায় একটু বেশীই সুবিধা পেয়ে থাকেন। ই-পাসপোর্ট থাকার ফলে আপনি ই-গেট ব্যবহার করে খুব সহজেই ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া ভিসা চেকিং এর জন্য আপনাকে লাইনে দাড়াতে হবেনা, ফলে ইমিগ্রেশন দ্রুত সম্পন্ন হবে। আপনাকে শুধু ই-গেটের নির্ধারিত স্থানে পাসপোর্ট রেখে দাড়াতে হবে।
এখানে একটি ক্যামেরা আপনার ছবি তুলে নেবে, এমনকি আঙুলের ছাপ যাচাইয়ের ব্যবস্থাও থাকবে। সব ঠিকঠাক থাকলেই আপনি ইমিগ্রেশন পার হয়ে যেতে পারবেন। যদি আপনার দেয়া পাসপোর্টে কোন গড়মিল থাকে তাহলেই একটি লাল বাতি জ্বলে উঠবে এবং আপনি ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যেতে পারবেন না।
পরিশেষে,
আশা করছি অনলাইনে ই পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে আপনি যথেষ্ট জেনেছেন উপরের আলোচনা থেকে। নিজেই পাসপোর্ট আবেদন করার জন্য সঠিক পদ্ধতি অবশ্যই জেনে রাখা দরকার। তাছাড়া কম্পিউটার সেবার দোকান থেকে আবেদন করতে আপনাকে বাড়তি ফী প্রদান করতে হবে। কাজেই, সঠিক নিয়ম মেনে এটি নিজেই করা ভালো। একজন ই পাসপোর্টধারী ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন, তাহলে আপনি কেন এসব সুবিধা নিবেন না? তাহলে এখনই ঘরে বসেই আপনার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করুন কোন বাড়তি চার্জ পে করা ছাড়াই।